ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

যশোরে খ্রিস্টান মিশন থেকে আদিবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে যা জানা গেল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

যশোরের কেশবপুর খ্রিস্টান মিশনে রাজেরুং ত্রিপুরা নামে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা ঘটনা ঘটেছে। মিশনের ম্যানেজার প্রদীপ সরকার তাকে ধর্ষণ করায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে সহপাঠীদের অভিযোগ। গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় পৌরশহরের শাহপাড়া খ্রিস্টান মিশনে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত রাজেরুং ত্রিপুরা বান্দরবন জেলার থানচি এলাকার রমেশ ত্রিপুরার মেয়ে।

এ বিষয়ে মিশনের পরিচালিকা জেসিকা সরকার বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

শনিবার (১৫ মার্চ) সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় সাহা পাড়ার খ্রিস্টান মিশনারী এলাকার কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী রাজেরুং ত্রিপুরা (১৫) ছাত্রীবাসে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার সহপাঠী তাকে রিডিং রুমে না পেয়ে খুঁজতে তার কক্ষে গেলে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা ফেলে। পরে তাকে উদ্ধার করে কেশবপুর সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে খ্রিস্টান মিশনের হোস্টেল সুপার প্রদীপ সরকারের স্ত্রী জেসিকা সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। এমনকি তার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা বা ঘটনাস্থল পরিদর্শনেরও কোনো সুযোগ দেয়নি।

জেসিকা সরকার বলেন, এই মিশনের ভিতরে সে ও তার স্বামী ছাড়া বাইরের কারোর প্রবেশের সুযোগ নেই। মিশনের দোতলার ছাত্রী নিবাসে তার রুমমেট হিসেবে স্বস্তিকা ত্রিপুরা নামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির একটি মেয়ে থাকে। ঘটনার সময় স্বস্তিকা ত্রিপুরা নিচতলায় রিডিং রুম পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। ঘটনার পর থেকে ওই মেয়েটিও খুব ভীত হয়ে পড়েছে।

সাংবাদিকরা মেয়েটির সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও জেসিকা সরকার কোনো অনুমতি দেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহতের বান্ধবীরা জানায়, রাজেরুং ত্রিপুরার মৃত্যু নিয়ে খ্রিস্টান মিশন এলাকায় নানা গুঞ্জন উঠেছে। তার সাথে অনৈতিক কিছু ঘটেছে বলে তারা মন্তব্য করছে। মিশনের ম্যানেজার তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করায় সে লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে।

এদিকে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত না হওয়া মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে পাহাড়ি মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে কেশবপুর সাহাপাড়াস্থ খ্রিস্টান মিশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা বলেন, ধর্ষণের কারণে হত্যা না কি আত্নহত্যা! তার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে আমাদের এ বিক্ষোভ!

এ বিষয়ে মিশনের সুপার প্রদীপ সরকার (৩৫) বলেন, মেয়েটির সাথে অন্যরকম কিছু ঘটেনি। সে এই মিশনে থেকে পড়ালেখা করতে চায়না। এই নিয়ে তার বাবা-মার সাথে ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। তারপর এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

কিন্তু নিহত মা রুমবানি ত্রিপুরা দাবি, থানায় ইতিমধ্যে মামলা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু প্রশাসন মামলা নিচ্ছেন না। নানা কথা বলে তারা আমাদেরকে হয়রানি করছে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। এমনকি তারা আমার মেয়ের লাশ এখন পর্যন্ত দেয়নি। মিশনারী কতৃপক্ষ এই ঘটনাকে নানাভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

মায়ের দাবি, এ ঘটনা নিয়ে কোনো সাংবাদিক এখন পর্যন্ত কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। সবাই আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিচ্ছে। আসল কথা হলো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান (খ্রীস্টফার সরকার) তার অনেক অবৈধ টাকা। যা দিয়ে তিনি ঢাকায় পালিয়ে গেছেন। আমার মেয়ে পারিবারিক কহলে আত্মহত্যা করার মতো ঘটনা ঘটেনি।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে ঘটনার দিন কতৃপক্ষ ভিক্টিমের বাবা মা সাজিয়ে  নকল দুজনকে নিয়ে আসে। পরে তারা সেখানে হাতেনাতে ধরা পরে। তাদেরকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে তারা স্বীকার করে।

এ বিষয়ে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রহস্যজনক কিছু জানা যায়নি। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে যার রিপোর্ট পাওয়া গেলে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে খ্রিষ্ঠান মিশনের সুপার জেসিকা সরকার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি আরও জানান, এই মিশনারিতে ইতিপূর্বে আরও দুই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার প্রকৃত কারণ আজও উদঘাটন হয়নি। ছাত্রীদের অভিভাবক স্থানীয় না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে পায় না।