ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মনিরুজ্জামানের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শহরের গার্ডেন সিটিতে বাসা ভাড়া নেন আরসার চার সদস্য। পরে আরও ওঠেন দুজন। আরাকান আর্মির সদস্যরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর শহরের অলিতে-গলিতে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এতে আতঙ্কে আছেন ভাড়াটিয়া ও বাসার মালিকেরা।
পুলিশ বলছে, বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় অবশ্যই ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই, ভাড়াটিয়ার ছবি তুলে রাখা, ভাড়াটিয়ার গ্যারান্টার নিশ্চিত করা, বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র করাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযোজন নিশ্চিত করতে হবে।
গত সোমবার ভোররাতে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধানসহ ১০ জনকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এর মধ্যে ময়মনসিংহ নগরের এলাকা নতুনবাজার মোড়ের একটি ভবন থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরসার সদস্যরা বাসাটি কীভাবে ভাড়া নিয়েছিলেন, কীভাবে সেখানে থাকতেন, তা নিয়ে কথা বলেছেন ভবনটির বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত সোমবার রাত ১টা থেকে ভোররাত পৌনে ৩টা পর্যন্ত নতুন বাজার মোড়ের বহুতল ভবন গার্ডেন সিটিতে অভিযান চালান র্যাবের সদস্যরা। ভবনটির ১০তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুজন নারী ও দুজন পুরুষকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে দুটি শিশু ছিল।
গার্ডেন সিটির দারোয়ান নিজাম উদ্দিন বলেন, ভবনের মালিক মাজহারুল ইমলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি নরসিংদীর পলাশে থাকেন। ভাড়ার নোটিশ দেখে চার মাস আগে মনিরুজ্জামানসহ দুই ব্যক্তি বাসাটি ভাড়া নিতে চান।
মনিরুজ্জামান ঈশ্বরগঞ্জের তারুন্দিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাসার দারোয়ান নিজাম উদ্দিনের বাড়িও ঈশ্বরগঞ্জে। তাদের বিশ্বাস করে মালিকের সঙ্গে কথা বলিয়ে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া দেন তিনি।
ভাড়া দেওয়ার সময় তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চান তিনি, তবে তারা ‘দিব, দিচ্ছি’ করে অনেক দিন কাটিয়ে দেন। পরে মনিরুজ্জামানের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেন, যেখানে বাড়ি উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী লেখা। বাবার নাম লেখা ছিল মো. আতিকুল ইসলাম।
দারোয়ান নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, দুই ব্যক্তি যখন ভাড়া নিতে আসেন, তখন নিজেদের ভাই বলে পরিচয় দেন। তারা বলেন, তাদের মা-বাবা এই ফ্ল্যাটে থাকবেন। তাদের বাবা গাজীপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি করেন।
একজন প্রবীণ ব্যক্তি এই বাসায় থাকতেন। ভবন থেকে মাঝে মাঝে নামার সময় খুব ধীরগতিতে হাঁটতেন। বাসার নারীরা পর্দা করায় দারোয়ান কখনো বাসার ভেতরে যাননি।
বাসা থেকে বাইরে খুব একটা যাওয়া-আসা করতেন না এই বাসার বাসিন্দারা। শুধু মনিরুজ্জামান পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি বাজার করে ওপরে চলে যেতেন। চার মাস ধরে এভাবেই বসবাস করছিলেন তারা।
ভবনের আরেক দারোয়ান রফিকুল ইসলাম বলেন, মনিরুজ্জামান নামের লোকটি ভাগনে পরিচয় দেওয়া ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সি কিশোরকে নিয়ে ভবনে ওঠানামা করতেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছবি দেখানো হলে দুই দারোয়ানই বলেন, এই চারজনের মধ্যে মনিরুজ্জামান নেই। আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ছবি দেখানো হলে তারা দাবি করেন, তাকে এই ভবনে আসা-যাওয়া করতে দেখেননি তারা।
দারোয়ান রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের পর বাসাটি থেকে দুজন পুরুষকে বের করা হলেও একজনকে তারা দেখতেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে সামুদ্রিক মাছ আনিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন, এমনটাই তারা জানতেন।
বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় যে ব্যক্তি মনিরুজ্জামান পরিচয় দিয়েছেন, তাকে তারা ভালো করে চেনেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি নেই। তার বাবা পরিচয় দেওয়া ও ভাগনে পরিচয় দেওয়া কিশোরও নেই।
ভবনটির ১১তলার বাসিন্দা আনিসুর রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন, এই ফ্ল্যাটে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজাও খুলতেন না।
ময়মনসিংহে দুই মামলা: এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার সাড়ে রাত ১০টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। র্যাব-১১-এর নায়েক সুবেদার হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। 
এতে আসামি করা হয়েছে আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী (৪৮), মোস্তাক আহাম্মদ (৬৬), মনিরুজ্জামান (২৪), সলিমুল্লাহ (২৭) ও তার স্ত্রী আসমাউল হোসনা (২৩), ১৫ বছর বয়সি কিশোর, আসমত উল্লাহ (২৪), মো. হাসান (৪৩), মোছা. শাহীনা (২২) ও ১৭ বছর বয়সি এক তরুণীকে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ জানিয়েছে, ময়মনসিংহ নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন ভাইবোন। আসমত উল্লাহ, শাহিনা আক্তার ও ১৭ বছর বয়সি তরুণী ভাইবোন।
তারা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের কাউনিয়া বিল এলাকার বাসিন্দা হলেও উখিয়ার থ্যাংকালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। গ্রেপ্তার অপরজন মো. হাসান। তিনি আরাকানের খুনকুন এলাকার বাসিন্দা হলেও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। মামলায় আরসার সদস্যদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণ, বিদেশি মুদ্রা, আরসা আর্মি লেখা ১৫টি নেমপ্লেট, মিলিটারি শার্টসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ দেখানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অবস্থান করায় ১০ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তবে বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের প্রয়োজনীয় চুক্তিপত্র ও জাতীয় পত্র অবশ্যই নেবেন। এ বিষয়ে বাসার মালিকদের ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।
 

 
                            -20250320035803.jpg) 
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
       -20251031160223.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন