মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:০১ এএম

রোহিঙ্গা ক্যাম্প অস্থিতিশীলে মূল হোতা হেডমাঝি রফিক

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১০:০১ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার থাইংখালী ১৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে সি-ব্লকের প্রতিটি বাড়িতে রাতের আঁধারে নারী-পুরুষের অশ্রু ঝরছে। ক্যাম্পের সিআইসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। 

ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) ফখরুল ইসলামের আশকারায় এসব অপরাধ সংঘটিত করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে আদায় করা অর্থ সিআইসি ও হেডমাঝি রফিক ভাগবাটোয়ারা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

তবে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজার জানিয়েছেন, সিআইসি ও হেডমাঝির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উখিয়া থাইংখালী এলাকার ক্যাম্প-১৯/ব্লক-সি’র হেডমাঝি মোহাম্মদ রফিক ক্যাম্প অস্থিতিশীল করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

অস্ত্র, ইয়াবা ব্যবসা, অপহরণ বাণিজ্য ও মুক্তিপণসহ নিরীহ রোহিঙ্গা নারীদের ওপর বর্বর হামলাসহ অপকর্মের যেন শেষ নেই। একাধিকবার অস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কিছুদিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের শুরু করে অপরাধ কর্মকাণ্ড। এই রফিক জেল থেকে ফিরে রাতে ছোড়েন গুলি, এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে রোহিঙ্গারা। 

ক্যাম্পের সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) ফখরুল ইসলামের নাম ভাঙিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের ফাঁদে ফেলে বিচার বাণিজ্য চালিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আরসা নেতা এই রফিক (এফসিএন-২০৮২০০)। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নেতা ও হেডমাঝি রফিক ওই ক্যাম্পের আবদুস সোবহানের ছেলে।

নিরাপত্তার কারণে নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বেশ কিছু ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি, তার হুকুমমতো কাজ না করলে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদে ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায়, সিআইসি অফিসে ধরে নিয়ে বিচার বাণিজ্য ও ক্যাম্পে উন্নত মানের এবং নতুন আগত রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার প্রলোভনে ফেলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার পেশায় পরিণত হয়েছে।

ক্যাম্পে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাদের উপর চলে রাতের আঁধারে নির্যাতন। এ কারণে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস যেন কারো নেই। বহু অপকর্মের মূল হোতা রফিককে হেডমাঝির দায়িত্ব থেকে অপসারণ এখন রোহিঙ্গাদের গণদাবিতে পরিণত হয়ে। 

তাকে অব্যাহতি দেওয়া না হলে সিআইসির দুর্নামের পাশাপাশি ক্যাম্পে অস্থিরতা বাড়বে। এমনকি ক্যাম্পের শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে যাবে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

রোজিনা নামের এক ভুক্তভোগী জানান, তার স্বামী ক্যাম্পে চাকরি করে। স্বামীর সাথে তার ভুল বোঝাবুঝি হয়। বিষয়টি ক্যাম্পের অভিযুক্ত হেড মাঝি মোহাম্মদ রফিককে জানাই। 

রফিক সেই সুবাদে কয়েকবার তার বাসায় যায় এবং বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার নামে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যালে হেড মাঝি রফিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

আবুল কাশেম নামের আরেক ভুক্তভোগী জানান, হেডমাঝি মোহাম্মদ রফিক তার বাড়ি দখলের চেষ্টা করে। এমনকি তার শিশুকন্যাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। 

বিষয়টি ক্যাম্প ইনচার্জকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে মাঝি রফিকসহ আরও ৭-৮ জন রোহিঙ্গা নিয়ে কাশেমের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এতে বাধা দিলে দা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে আহত করে। এ ব্যাপারে উখিয়া থানায় রফিকের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। 

ওই ক্যাম্পের সাব মাঝি এনায়েত উল্লাহ বলেন, শামশুল আলম ও এনামকে হেড মাঝি বানানোর জন্য সিআইসি ফখরুল ইসলামকে দেওয়ার কথা বলে তার মাধ্যমে ৪৫ হাজার করে ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে। 

তারা হেডমাঝি হওয়ার পর জানতে পারে সিআইসি কোনো টাকা নেয়নি। তারা এনায়েতের কাছে টাকা ফেরত চায়। বিষয়টি জানিয়ে বিচারের জন্য সিআইসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। 

এ ছাড়া ক্যাম্পে একরাম নামের একজনের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার অভিযোগ এনে তাকে জিম্মি করে ১ লক্ষ টাকা আদায় করেন। এমনকি হেডমাঝির ক্ষমতা দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেন এই রফিক।

এদিকে, সম্প্রতি ব্লক-সি/৭ এর বাসিন্দা আবদুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমানকে দিনদুপুরে গুলি করে এই হেডমাঝি মোহাম্মদ রফিক। 

ব্লক-সি’তে কর্তৃত্ব দেখাতে গিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্যাম্পের ২ টাকার বাজারে মাহবুবকে গুলি করে হেডমাঝি রফিক। এই ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। 

একই ক্যাম্পের ইলিয়াছের ছেলে মো. আলম নামের একজন অভিযোগ করেন, তাকে মাঝি নিয়োগ দেওয়ার জন্য সিআইসি ও এপিবিএন ওসির জন্য ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নেন অভিযুক্ত হেডমাঝি রফিক। 

মাঝি নিয়োগের নামে প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এলে উক্ত টাকা ফেরত চাওয়ায় বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে এই রফিক। এতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে মো. আলম। 

একই ক্যাম্পের ব্লক-ডি-এর মো. ছলিম জানান, তাকেও মাঝি হিসেবে নিয়োগ দিতে মিথ্যা প্রলোভনে ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরে টাকা ফেরত চাওয়ায় আরও উল্টো হুমকি দিচ্ছে। 

ক্যাম্পের সি-১০ ব্লকের আল-মরজান ও হামিদা বেগম জানান, তাদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার নেন। পাওনা ৭০ হাজার টাকা ফেরত চাইলে তা না দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। সিআইসি বরাবর অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাইনি। জীবন বাঁচাতে তারা বিদেশ চলে যায়। 

ভাসানচরে পাওয়া ঘরটি পেতে রফিককে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে জানায়। এপিবিএন পুলিশ বরাবর ভুক্তভোগীদের পক্ষে সোনা মিয়াসহ আরো ৪টি ব্লকের মাঝি লিখিত অভিযোগ দেন। 

তারা দাবি করেন, অভিযুক্ত হেডমাঝি রফিক খারাপ লোক ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। এপিবিএন অস্ত্রসহ তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। টাকার বিনিময়ে দেড় মাস পর জেল থেকে বেরিয়ে আরো সন্ত্রাসী দিয়ে দল গঠন করে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে হেডমাঝির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির দাবি জানান তারা।

ক্যাম্প-১৯, বি-৫ ব্লকের একজন নারীর কাছ থেকে হাকিমপাড়া ক্যাম্পে স্থানান্তরের জন্য সিআইসির নামে ১১ হাজার টাকা আদায়, সিআইসির সাথে যোগসাজশে আরো ২ জন নারীর জায়গা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

এমনকি এক নারী থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা ও দুটি বড় মুরগি নিয়ে যায় এই চাঁদাবাজ হেডমাঝি রফিক। ব্লক-১৭ এর আতাউল্লাহ অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলা আপস করে দেওয়ার নামে ১০ হাজার টাকা নেন এই হেডমাঝি রফিক।

ব্লক-বি-৪ ভুক্তভোগী একরাম জানান, গত ৮ জানুয়ারি জুয়াখেলার অভিযোগ এনে সাব-মাঝি গুরামিয়া ও সোহাইবের মাধ্যমে সিআইসির নামে ১ লাখ টাকা আদায় করেন হেড মাঝি রফিক। 

গত ১১ মাস আগে ক্যাম্প-২০ (এম-৩৯) এর বাসিন্দা পাচার হওয়া লালুকে সিআইসির মাধ্যমে উদ্ধারের নামে সাব-মাঝি মোহাম্মদ জুবায়েরকে দিয়ে তার স্বজন থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন হেডমাঝি রফিক। 

এদিকে, ডজন-ডজন অভিযোগ থাকার পরেও কেন অভিযুক্ত রফিককে হেড মাঝির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে না সিআইসি, তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা  দিয়েছে। তাই অবিলম্বে বহু অপকর্মের হোতা হেড মাঝি মোহাম্মদ রফিককে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীসহ ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। 

ক্যাম্প-১৯ এর সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ)  ফখরুল ইসলাম জানান, তিনি কয়েক মাস আগে যোগদান করেছেন। হেড মাঝি রফিক তার মাধ্যমে নিয়োগ নয় দাবি করেন। 

তারপরও খোঁজ-খবর নিচ্ছি। ভুক্তভোগীদের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি বলে জানান। তবে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সিআইসিকে অফিসে ডাকা হবে। সিআইসি ও হেড মাঝি রফিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!