আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন। এদিন শ্রমিকদের বিজয় হলেও মহান মে দিবসের উদ্দেশ্য এখনো নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমিকেরা চরম মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা।
তাদের শ্রমেই নগর, সভ্যতা গড়ে উঠলেও ভাগ্যের চাকা ঘোরে না জহুরাদের। সংসারের হাল ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে জামেনার মতো অনেক নারী শ্রমিক দালান, সেতু, রাস্তার কাজে ব্যবহৃত ভাঙা ইটের টুকরো তৈরির কাজ করে চলেছেন।
দুর্গাপুর পৌর শহরের দেশওয়ালীপাড়া এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন জায়গায় ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে ইট ভাঙার কাজ করে আসছেন শতাধিক নারী। এদের মধ্যে কারো স্বামী নেই, কারো স্বামী অসুস্থ।
কেউ সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে, কেউ দিনমজুর স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টায় ইট ভাঙার কাজ করেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে হাতুড়ি দিয়ে ইট ভেঙে খোয়া তৈরির কাজ।
প্রতি বস্তুায় পারিশ্রমিক ১৫ টাকা। একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ইনকাম করতে পারেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খোয়া ভাঙতে প্রায় দিনই হাতুড়ি কিংবা ইটের আঘাত পান হাতে-পায়ে।
এরপরও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে তারা অব্যাহত লড়াই-সংগ্রাম করে যান। স্থানীয়রা এখান থেকে স্বল্পমূল্যে খোয়া কিনে প্লাস্টার, ঢালাইসহ নানা কাজে ব্যবহার করেন।
এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের বালিকান্দি গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী জহুরা।
তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে। ছেলের মানসিক সমস্যা থাকায় ছেলের বউ ও নাতনিদের আমার খাওয়াতে হয়। এ জন্য বুড়া বয়সে, চোখে কম দেখি তারপরও বাধ্য হয়ে ইট ভাঙার কাজ করছি।’
বুরুঙ্গা গ্রামের নারী শ্রমিক জহুরা বেগম বলেন, ‘স্বামী দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে ফেলেছে, কাজ করতে পারে না। আমি ইট ভেঙে স্বামীর ওষুধের খরচসহ সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা ইনকাম করতে পারি। এটা দিয়ে কষ্ট করে চলি।’
একই গ্রামের জাহানারা বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ। ছেলেরা তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খায়। এ জন্য ১০ বছর যাবৎ ইট ভাঙার কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’
চকলেংগুরা গ্রামের আরতি রবিদাস বলেন, ‘স্বামীর উপার্জনের টাকায় সংসার চলে না। তাই সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ নিজের খরচ জোগাতে ইট ভাঙার কাজ করছি দীর্ঘদিন যাবৎ।’
দেশওয়ালীপাড়া এলাকার ইট ভাঙা সুরকি ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার এখানে ১৩ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তারা প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা ইনকাম করতে পারেন। আমি এসব ইটের খোয়া স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে নিজের সংসার চালাচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা যদি বৈষম্যের শিকার হন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমিকদের জন্য সরকারি সহযোগিতা এলে এসব নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন করা হবে।’