পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘বন্ধের ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে শহরের ফকিরের বটতলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী চলে মানববন্ধন।
এতে স্টেশন রোডের দুই পাশে দাঁড়িয়ে দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন।
‘ঈশ্বরদী সচেতন নাগরিকসমাজ’ আয়োজিত মানবন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন।
সাংবাদিক ওহিদুজ্জামান টিপুর সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম ফজলুর রহমান।
বক্তব্য দেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস আলমগীর, ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন জনি, নির্বাহী সদস্য আবু সাঈদ লিটন, আমিনুর রহমান স্বপন, শামসুদ্দোহা পিপ্পু, ইমরুল কায়েস সুমন, মাহমুদ হাসান সোনামনি, রফিকুল ইসলাম রকি, রফিকুল ইসলাম নয়ন, নারীনেত্রী শামীম আরা সাথী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ইব্রাহিম হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে এসএম ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিগত কিছুদিন ধরে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে এনপিবিসিএলে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী দাবি আদায়ের নামে প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। যা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প চালু করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঈশ্বরদীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের প্রকল্প বন্ধ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যত দূর জানি, এমনিতেই নানা কারণে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের কাজ অনেক পিছিয়ে গেছে। এ মুহূর্তে ৯৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসেই গ্রিডের সঞ্চালন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর ডিসেম্বরে স্টাটআপ করার কথা। এ অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনা অশুভ সংকেত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে স্পর্শকাতর পরমাণু প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ব দরবারে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এনপিবিসিএলে প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এ সময় বিএনপি ও বিরোধীদলের কাউকে নিয়োগ বা যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করতে এবং ফ্যাসিস্টের দোসর যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে রূপপুর প্রকল্প সার্বক্ষণিক আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নজরদারিতে থাকে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আন্দোলন, সমাবেশ বিশ্বে নজিরবিহীন ঘটনা। প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তার শর্ত ভেঙে মিছিল-সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা শুধু চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজই করেননি, প্রকল্পের অগ্রগতি ও পরবর্তী ধাপের ‘জীবন নামের রেলগাড়ি’ আইএইএ’র লাইসেন্সপ্রাপ্তিও হুমকিতে ফেলেছে।’
রূপপুর প্রকল্প ঘিরে রাশিয়াসহ বিদেশিদের আগমনে ঈশ্বরদীর আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রসার এবং প্রকল্প দেশীয় প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। রূপপুর প্রকল্প ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকার ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বন্ধ হলে ঈশ্বরদীর অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে এবং বিমানবন্দরও আর চালু হবে না।’
ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রকল্পের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের হঠকারি আচরণে মনে হয়েছে, তারা পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মাঠে নেমেছে। নিময়তান্ত্রিক প্রতিক্রিয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়ার পরও তারা আন্দোলনের নামে ন্যক্কারজনক কাজ করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’