শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ১১:৪০ এএম

ধরাছোঁয়ার বাইরে সুব্রত বাইন-মোল্লা মাসুদের আশ্রয়দাতা হেলাল

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ১১:৪০ এএম

সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে আশ্রয় প্রদানকারী হেলাল (গোল চিহ্নিত ব্যক্তি)।    ছবি- সংগৃহীত

সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে আশ্রয় প্রদানকারী হেলাল (গোল চিহ্নিত ব্যক্তি)। ছবি- সংগৃহীত

ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত ও একাধিক হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী গত ২৭ মে ভোরে গ্রেপ্তার করে। তিনতলা একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ তাদের আটক করা হয়।

সুব্রত বাইনদের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসী আটকের সংবাদ দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তবে সুব্রত বাইনের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসী আটকে জনমনে যতটা না আলোচনার জন্ম দেয়, তার চেয়েও বেশি প্রশ্ন উঠেছে- কে এই আশ্রয়দাতা হেলাল উদ্দিন? সেনাবাহিনীর বড় অভিযানের পরও কেন তিনি অধরা?

কে এই হেলাল উদ্দিন?

সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ আটকের পর থেকেই ঘুরেফিরে আসে হেলালের নাম। কারণ, হেলালের মাধ্যমেই সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা সড়কের তিনতলা ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন।

বাড়িটি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা পৌরসভার প্রয়াত মেয়র মীর মহিউদ্দিনের। হেলালের পরিবারের সাথে প্রথম মোল্লা মাসুদের পরিচয় হয়। তারপর আসেন সুব্রত বাইন।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের সাথে পরিচয়ের পর থেকে কপাল খুলে যায় হেলালদের পরিবারের। সুব্রত বাইনের সহায়তায় পাড়ি জমান দুবাইয়ে। সেখানে সুব্রত বাইনও বেশ কয়েক বছর থেকেছেন। বছর দশেক দুবাইয়ে অবস্থান শেষে বছর দেড়েক আগে দেশে ফিরে আসেন হেলাল। অপরাধ জগতে যখন সুব্রত বাইনদের জয়জয়কার, তখন মাঝে মধ্যেই হেলালদের বাড়িতে আসতেন সুব্রত বাইনেরা। মাস দেড়েক আগে বাসিন্দা হয়ে যান কালিশংকরপুরের আলোচিত ওই তিনতলা বাড়ির। যে বাড়ি থেকে ২৭ মে তারই সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ আটক হন। উদ্ধার হয় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ।

আশপাশের বাসিন্দারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই হেলালের বাড়িতে একটি খয়েরি রঙের বিলাসবহুল গাড়ি আসত। ওই গাড়িতে যারা আসত তাদের মধ্যে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে দেখেছি।

আরও যারা আসত তাদের দেখলে চিনতে পারব। পরে মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন মীর মহিউদ্দিনের তিনতলা বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকত। তারা আটক হলে জানতে পারি, ওরাই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ। মানুষ হিসেবে ওরা সামাজিক ছিল না। প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ করত না। 

কুষ্টিয়ার যে বাড়ি থেকে সুব্রত ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেই বাড়িটি তিনিই ভাড়া করেছিলেন।

তারা আরও বলেন, হেলালরা চার ভাই। সবার বড় রাশিদুল ইসলাম। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজে পিয়ন পদে চাকরি করেন। মেজোভাই হাফিজ বাড়িতে তৈরি মোটরপার্টসের ব্যবসা করেন। সেজো হেলাল উদ্দিন। আর্থিকভাবে সচ্ছল তিনিই। সবার ছোট ভাই বেলাল বর্তমানে দুবাইয়ে চাকরি করছেন। 

যে বাড়িতে তারা বসবাস করেন ওই বাড়িটি তাদের নিজের। ১৫-১৬ বছর আগে এই বাড়িটি তারা কিনে নেন। তার আগে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেছেন।

সীমান্তসংযোগ ও আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন

হেলালের বাবা প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বসবাস করতেন এবং সেখানেই সুব্রত বাইনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। এরপর সম্পর্ক গড়ে ওঠে হেলালের সঙ্গে। সুব্রতের সহায়তায় হেলাল পাড়ি জমান দুবাইয়ে। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি কুষ্টিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, হেলালের বাড়িতে প্রায়ই বিলাসবহুল গাড়ি আসত, যাতায়াত করতেন অপরিচিত লোকজন। তখন কেউ বুঝতে পারেননি, এদের মধ্যে রয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন।

রাজনীতির ছায়া ও ক্ষমতার যোগাযোগ

হেলালদের পরিবার কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ বলেও স্থানীয়রা দাবি করেছেন। হেলালের বড় ভাই রাশিদুল ইসলাম কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজে পিয়ন পদে চাকরি পান এমপি হানিফের সহযোগিতায়। এমনকি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও হানিফের হয়ে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেন বলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অভিযোগ।

রহস্যময়ী সুন্দরী নারী কে

আশ্রয়স্থল বাড়িতে সুব্রত ও মাসুদের সঙ্গে এক রহস্যময়ী নারীকে দেখা যেত নিয়মিত। স্থানীয়রা তাকে জামা কাপড় মেলতে দেখলেও কেউ তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। গত মঙ্গলবার (২৭ মে) সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তারের পর প্রশ্ন ওঠে তাদেরই সাথে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সুন্দরী নারীটি আসলে কে? নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ বলেন, ওই নারী সুব্রত বাইনের স্ত্রী হবে হয়তো। আবার কেউ বলেন, তিনি আসলে তাদের রক্ষিতা। হেলালের মাধ্যমেই আগত ঘটে তার।

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- যেখানে সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামতে হয়েছে, সেখানে হেলাল কেমন করে এখনো অধরা থাকেন?

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তাদের এই অপারেশনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন হেলাল।

সুব্রত বাইনের যত অপরাধ

সুব্রতর নামে ৩০টিরও অধিক খুনের মামলা রয়েছে, যার প্রায় সবটিতেই এই সন্ত্রাসী সাজাপ্রাপ্ত। এ ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র এবং চাঁদাবাজিসহ প্রায় ১০০ মামলার আসামিও তিনি। ২০০১ সালে পুরস্কার ঘোষিত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার রেড কর্নার নোটিশপ্রাপ্ত। ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে তার আশ্রয়দাতারা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাওয়ার কারণে পেশাদার এই অপরাধী সাধারণ জনগণের সাথে মিশে যায়।

২০০১ থেকে ভারতে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি’র (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) ছত্রছায়ায় ছিলেন সুব্রত। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী তাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থান করা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন উলফা, নাগাল্যান্ড লিবারেশন ফ্রন্টের নেতাসহ, মোস্তাকিম চাপ কাবাব-এর মালিক মোস্তাকিমকে হত্যা করিয়েছে।

বিশেষ সূত্র বলছে, ‘তিমোথি সুব্রত বাইন’ নামে পরিচিত এই সন্ত্রাসী বর্তমানে ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছিলেন।

অভিযানের পরেও হেলালের ধরা না পড়া কেবল রহস্যই নয়, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতির বড় উদাহরণ হয়ে উঠছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, হেলালকে ধরতে অভিযান চলছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!