কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ি গ্রামে গণপিটুনিতে একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন রুবি বেগম (৫৮), তার ছেলে রাসেল (৩৫) এবং মেয়ে জোনাকি আক্তার (২৭)। এছাড়া, আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর রাসেলের ভাবি রুমা আক্তারও মারা যান।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, নিহত রুবি বেগমের বিরুদ্ধে প্রায় ৮২টি মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
সম্প্রতি এলাকায় মোবাইল চুরির একটি ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, এবং এলাকাবাসীর দাবি, এই ঘটনায় রুবি বেগম ও তার ছেলে রাসেল অভিযুক্ত পক্ষের কয়েকজনকে মারধর করেন।
এরই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে শতাধিক গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি মারধরের ফলে ঘটনাস্থলেই রুবি, রাসেল ও জোনাকি মারা যান।
নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের দোকানের এক কর্মচারী কয়েকদিন আগে মোবাইল চুরি করে বশির মিয়ার বাড়ি থেকে। ওই ঘটনার জেরে বশির ও তার লোকজন আমাদের কর্মচারীদের আটকে রেখে নির্যাতন করে।
পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার শালিসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শনিবার সকালে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আমার শাশুড়ি পরিবার তিন বছর আগে মাদকব্যবসা ছেড়ে দেয়।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চুরি বা মাদক যে অভিযোগই থাকুক, কোনোভাবেই কাউকে এভাবে পিটিয়ে মারা যায় না। এটা যে কেবল আইনহীনতা নয়, বরং মানবতাবিরোধী আচরণ।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, নিহতদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই গ্রামবাসী এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারা এতে জড়িত, তা শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) নজির আহমেদ খান বলেন, নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও কাউকে হত্যার অধিকার কারও নেই।
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :