বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ইনসান সাগরেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৭:১০ পিএম

পঞ্চগড়ে চা কারখানা দখলের অভিযোগ

ইনসান সাগরেদ, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৭:১০ পিএম

পঞ্চগড় সদরের কেচেরাপাড়া এলাকায় ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাষ্ট্রিজ’ নামক চা কারখানা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পঞ্চগড় সদরের কেচেরাপাড়া এলাকায় ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাষ্ট্রিজ’ নামক চা কারখানা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পঞ্চগড়ে ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামের একটি চা কারখানা ‘দখলের’ অভিযোগ উঠেছে। মালিক পক্ষের একটি গ্রুপসহ স্থানীয় কয়েকজন চা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে কারখানার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে ‘বেকার হওয়ার’ উদ্বেগ বিরাজ করছে।

‘জোরপূর্বক দখলের’ অভিযোগ এনেছেন কারখানাটি দুইজন পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম। তারা জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় টি বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের একটি অনুলিপি রূপালী বাংলাদেশের হাতেও রয়েছে।

এতে হিসাবনিকাশের গড়মিলের অভিযোগ তুলে ২০২২ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রভাব খাটিয়ে কারখানার একাংশের মালিক কাজী বোরহান উদ্দিন কারখানা থেকে বের করে দিয়ে পুরো দখলের অভিযোগ করেন রাজ্জাক ও তারিকুল।

তাদের এও অভিযোগ, বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক গত তিন বছরে কারখানার উৎপাদন পরিচালনা করে লভ্যাংশের প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করে পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন এবং কোম্পানিকে ঋণ খেলাপি করে নিয়েছেন। 

তা ছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে ব্যাংক হিসেবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল। সেই টাকাও তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।

তবে বিষয়টি রূপালী বাংলাদেশের কাছে অস্বীকার করেছেন কাজী বোরহান উদ্দিন। তার উল্টো অভিযোগ, তার পরিবারের কাছে মালিকানা হস্তান্তরের চুক্তি করেও ‘এখনো মালিকানা ছাড়ছেন না’।

পঞ্চগড় কেচেরাপাড়ার ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামক চা কারখানার ভেতরে রাখা বাগান থেকে সংগৃহীত কাঁচা চা পাতা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পঞ্চগড় সদরের কেচেরাপাড়া এলাকায় উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজটি অবস্থিত। ২০১৮ সালে ৭ বিঘা জমির ওপর চা কারখানাটি স্থাপন করা হয়। এটি ৬ লেনের কারখানা। বর্তমানে কারখানাটি লিজ নিয়ে চালাচ্ছেন অন্যপক্ষ।

রাজ্জাক ও তারিকুলের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তৎকালীন পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসার কাজী বোরহান উদ্দিনের ছায়া উদ্যোগে ২০১৮ সালে কারখানাটি স্থাপন করা হয়। তিনি সরকারি কর্মকর্তা বলে নিজের নামে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে রেজিস্ট্রেশন না করে তার বিশ্বস্থ কাজী এ এন এম আমিনুল হকের নামে ৬৫ শতাংশ মালিকানা উল্লেখ করে এই কারখানার রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আর ৩০ শতাংশের মালিক হন আব্দুর রাজ্জাক এবং ৫ শতাংশের মালিক হন তারিকুল ইসলাম।

অভিযোগে বলা হয়, পরবর্তীতে কাজী আমিনুল হক বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী আইরিন পারভিনের নামে ১০, ছেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শায়মান সাদিকের নামে ৩৫, তার ভায়রা শাহ আলমের নামে ১০ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করেন। তবে করোনাকালে কাজী আমিনুর রহমান মারা গেলে তার রেখে যাওয় ১৫ শতাংশের শেয়ার এখনো অবশিষ্ট আছে। অন্যদিকে আব্দুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম মালিকানা রিসিডিল করে ২০ ও ১০ শতাংশের মালিক হন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকার রূপালী ব্যাংক দিলখুশা স্থানীয় কার্যালয় থেকে মর্টগেজকৃত ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ওই সময় বোরহান উদ্দিন এবং আব্দুর রাজ্জাকের পরিচালনায় কারখানাটি চা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। তখন প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। কিন্তু হিসাবনিকাশের গড়মিলের অভিযোগ তুলে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা আনোয়ার সাদাত সম্রাটের শেল্টার নিয়ে কারখানা থেকে পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক এবং তারিকুল ইসলামকে বের করে দিয়ে পুরো কারখানা দখলে নেন বোরহান উদ্দিন।

অভিযোগে রাজ্জাক ও তারিকুল দাবি করেন, নানা ধরনের রাজনৈতিক হুমকি দিয়ে বোরহান উদ্দিনের পরিবারের কাছে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ এই দুই পরিচালককে শেয়ার হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুই পরিচালকের পাওনা ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করেননি।

অন্যদিকে গত ৫ আগস্টের পর কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় কয়েকজন চা ব্যবসায়ীর কাছে বোরহান উদ্দিন, তার স্ত্রী, ছেলে এবং ভায়রা মিলে ৩ বছরের জন্য লিজ প্রদান করেন। বতর্মানে সেই লিজের আওতায় কারখানাটি চলছে।

পঞ্চগড় কেচেরাপাড়ার ‘উত্তরা গ্রীন টি ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামক চা কারখানার ভেতরের দৃশ্য। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আওয়ামীলীগ শাসনামলে আমাদেরকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়। জয়েনস্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী আমরা এই কোম্পানির এখনো পরিচালক। কিন্তু আমাদেরকে না জানিয়ে কোম্পানি লিজ দেওয়া হয়েছে।’

অপর অভিযোগকারী তারিকুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে মালিকানা হস্তান্তরের চুক্তিপত্র করা হয়েছে। সেই চুক্তিপত্রেরও সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।’

‘ব্যাংক ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে। আমাদেরকে কারখানায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি কোনো বিচার পাচ্ছি না।’ বলেন অভিযোগকারীরা।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থানা পরিচালককে দেওয়া কাজী মোহাইমিনুল হক নামের এক শেয়ার হোল্ডারসহ তারিকুল ও রাজ্জাকের এক আবেদনে বলা হয়, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোম্পানির মূলধন ও লভ্যাংশ আত্মসাৎ করে বিধি বহির্ভূতভাবে আমাদের ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছেন।

তাদের আবেদনে আরও বলা হয়, ‘জোরপূর্বক পেশিশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কারখানায় প্রবেশে এবং সকল প্রকার দায়িত্ব ও কার্যক্রমে বাধা প্রদান করেছেন, যা অব্যাহত আছে।’

পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কাছেও আবেদন করেছেন অভিযোগকারীরা। আবেদনে কারখানাটি প্রকৃত মালিকদের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সহায়তা চেয়েছেন তারা।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইরিন পারভিন ও তার স্বামী বোরহান উদ্দিন।

বোরহান উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘তারা কারখানার মালিক এটা সত্যি, কিন্তু তারা মালিকানা আমার পরিবারের কাছে হস্তাস্তর করেছেন। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার শেল্টার নেওয়া হয়নি।’

রাজ্জাক ও তারিকুলের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ তুলে বোরহান উদ্দিন আরও বলেন, ‘মালিকানা আমার পরিবারের কাছে হস্তাস্তর করেও তারা এখনো আমাদেরকে মালিকানা হস্তান্তর করছে না।’

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুমন চন্দ্র দাশ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে চা বোর্ড জানায়, পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বর্তমানে ছুটিতে আছেন। তাকে ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কারখানা সূত্র জানায়, মালিকানা দ্বন্দ্বের কারণে চা কারখানাটি বন্ধের উপক্রম দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, চা কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলে কারখানায় কর্মরত শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে। কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারীও কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

Shera Lather
Link copied!