রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম

সেই স্বপ্ন আজ কবরস্থ!

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম

জুলােই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আব্দুল্লাহ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জুলােই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আব্দুল্লাহ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

২০২৪ সালের ‘জুলাই বিপ্লব’ শুধু একটি ছাত্রআন্দোলন নয়—তা হয়ে উঠেছিল এক প্রজন্মের ক্ষোভ, বঞ্চনা আর ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ। ঢাকার রাজপথে চলা সেই আন্দোলনের উত্তাপে মুখর ছিল পুরো দেশ, যেখানে তরুণেরা কণ্ঠ তুলেছিল বৈষম্য ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনের এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে স্থান করে নেয় একটি নাম—শহীদ আব্দুল্লাহ।

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামের দিনমজুরের সন্তান আব্দুল্লাহ ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকায় বড় বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট হলেও স্বপ্ন ছিল সবচেয়ে বড়—দেশের জন্য কিছু করে দেখানোর।

সেই স্বপ্ন থেমে যায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে শান্তিপূর্ণ একটি মিছিলে অংশগ্রহণ করার সময় পুলিশের গুলিতে কপালে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ। দুই থেকে তিন ঘণ্টা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। 

পরে তাকে পথচারীদের সহায়তায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। অস্ত্রোপচারে গুলি বের করা হলেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরই মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে শুরু হয় ভোগান্তি। ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এরপর বেনাপোলে ফিরে যান আব্দুল্লাহ। অবস্থার অবনতি হলে আবার খুলনা মেডিকেল, পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে হয়। অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ নভেম্বর সকাল ৮টায় ঢাকা সিএমএইচে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ।

আন্দোলনের সময় আব্দুল্লাহর পাশে থাকা শাওন হেসেন বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ছিলেন সহজ-সরল, অধ্যয়নরত, সৎ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় কণ্ঠস্বর। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কখনো বৃথা যায় না।’

প্রতিবেশী সেলিম রেজা বলেন, ‘তার মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের শোক নয়, বরং জাতির বিবেকের প্রশ্ন। তিনি এখন একটি প্রতিরোধের প্রতীক।’

আব্দুল্লাহর এক প্রতিবেশী ভাবী শিল্পী খাতুন বলেন,‘ছোট থেকেই ভদ্র, নম্র আর সবার প্রিয় ছিল। ঢাকা থেকে ছুটিতে এলে আশপাশের খোঁজ নিত। ওর স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ কবরস্থ।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেনাপোল পৌর শাখার সদস্যসচিব সাজেদুর রহমান শিপু বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আমাদের ২০১৭ সালের এসএসসি ব্যাচের বন্ধু। আমরা তার পরিবারের পাশে আছি এবং তার নামে বেনাপোল পৌর গেটের নামকরণের দাবি জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে তার পরিবারকে এককালীন ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

আব্দুল্লাহর মা মাবিয়া বেগম বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলায় খুব ভয় পেত। কে জানত সেই ভয় পাওয়া ছেলেটাই একদিন রাজপথে দাঁড়াবে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে? এখনো কানে বাজে ওর ডাক—‘মা মা!’ কিন্তু সে আর ফেরে না।’

বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘শেষবার বলেছিল, ‘আব্বু, দেশ মুক্ত হয়ে গেছে।’ সেটাই ছিল আমাদের শেষ কথা।’

বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘সরকারি সহায়তার আশ্বাস বারবার পেলেও বাস্তবে এখনো কিছু পাইনি। রাষ্ট্রের সহানুভূতি এখনো অধরা।’

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাজী নাজিব হাসান বলেন, ‘শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের ব্যাংক হিসাবসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমরা সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। এককালীন ৩০ লাখ টাকা অনুদান, ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ও মাসিক ভাতা প্রক্রিয়াধীন।’

আব্দুল্লাহর স্মরণে বেনাপোল পৌরসভার প্রধান প্রবেশ গেটটির নাম ‘শহীদ আব্দুল্লাহ গেট’ রাখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সেই গেট দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন হাজারো মানুষ। তারা চান সেখানে স্থাপন হোক একটি স্মৃতিফলক, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাবে—কীভাবে একজন সাধারণ ছাত্র রক্ত দিয়ে লিখে গেছে গণতন্ত্রের ইতিহাস।

Shera Lather
Link copied!