‘লামিয়া, তোর কাকা আসছে বিদেশ থেকে... উঠ মা, ঘুম থেকে উঠ... তোর স্কুলের ম্যাডামরাও আইছে... গ্রামের সবাই তোকে দেখতে আইছে মা...’—এভাবেই কান্নাভেজা কণ্ঠে আহাজারি করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বছরের লামিয়া ইসলামের খালা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজার এলাকায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে ওমান প্রবাসী বাহারকে নিয়ে আসার সময় যাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের রহমতখালী খালে পড়ে যায়। এতে ৩ শিশুসহ ৭ জন নিহত হন।
দুর্ঘটনার সময় মাইক্রোবাসটিতে ১৩ জন যাত্রী ছিলেন। চালকসহ ৬ জন জানালা দিয়ে বের হয়ে প্রাণে বাঁচলেও বাকিরা খালে ডুবে মারা যান। দুর্ঘটনার সময় গাড়ির দরজা লক করা থাকায় অনেকে বের হতে পারেননি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহতরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পানির নিচে আটকে ছিলেন।
নিহতদের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাসালী বাড়িতে। নিহতরা হলেন: প্রবাসী বাহারের মা মুরশিদা (৫০), স্ত্রী কবিতা (২৩), মেয়ে মীম (২), নানি ফয়জুন নেছা (৭০), ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী (২৫), ভাতিজি লামিয়া (৮) ও অপর ভাতিজি রেশমী (৯)।
নিহত লামিয়া স্থানীয় চৌপল্লী কেডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার সহপাঠী তীতা সূত্র রায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘লামিয়া ভালো ছাত্রী ছিল। তার রোল ছিল ১২। সে তার বাবাকে আনতে গিয়ে আর ফিরল না। এখন থেকে সে আর স্কুলে আসবে না।’
প্রবাসী বাহারের বাবা আবদুর রহিম জানান, আমার ছেলে প্রায় আড়াই বছর পর দেশে ফেরে। তাকে আনতে ঢাকায় গিয়ে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করি। রাতে রওনা দিয়ে ভোরে চন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকায় পৌঁছালে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে। তীব্র স্রোতের কারণে মুহূর্তেই গাড়িটি তলিয়ে যায়।
বুধবার সকালে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, এলাকাবাসী—সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। একসঙ্গে সাতজন স্বজন হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন, কোনো সান্ত্বনাই যেন তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
আপনার মতামত লিখুন :