মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান, আদিতমারী 

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:২৫ পিএম

মাথা গোঁজার ঠাঁই চায় জুলাই শহীদের পরিবার, বেদখল জমি উদ্ধারের আকুতি

হাসানুজ্জামান হাসান, আদিতমারী 

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ০১:২৫ পিএম

লালমনিরহাটে বেদখল জমি উদ্ধারে প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন শহীন মিরাজের মা মোহছেনা বেগম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটে বেদখল জমি উদ্ধারে প্রশাসনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন শহীন মিরাজের মা মোহছেনা বেগম। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কান্না যেন থামছেই না জুলাই শহীদ মিরাজের মা মোহছেনা বেগমের। গত বছরের ৫ আগস্ট লালমনিরহাটের মিরাজ ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। বাড়ির পাশে ছেলের কবর দেখলেই দুচোখ বেয়ে জল আসে মা মোহছেনার। 

ছেলের কথা মনে পড়লেই কবরের পাশে গিয়ে চোখের জল ফেলেন এই মা।

‎এদিকে, পুত্রশোকে অসুস্থ হয়ে বাবা আব্দুস ছালামও পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। বড় ছেলে আর স্বামীকে হারিয়ে এখন দুচোখে অন্ধকার দেখছেন জুলাইয়ে শহীদ হওয়া সন্তানের জননী মোহছেনা। সংসারের খরচ মেটাতে বাধ্য হয়ে শহীদ মিরাজের স্কুলপড়ুয়া ছোট ভাই মেজবাউল স্কুলের ফাঁকে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। স্কুলে গেলে বন্ধ হয় দোকান আর দোকান চালু রাখলে বন্ধ হয় স্কুলে যাওয়া।

‎শহীদ মিরাজুল ইসলাম মিরাজের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের আনসার খাঁর পুকুরপাড় এলাকায়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান মিরাজ।

সড়েজমিনে শহীদ মিরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ডোরা নদীর পাড়ঘেঁষা বাড়ি তাদের। বাড়ি যাবার রাস্তাটি সম্প্রতি সরকারিভাবে পাকা করে দেওয়া হয়েছে। চাচা আবুল কালামের জমিতে একটা লম্বা টিনসেড ঘরের মাঝে বেড়া দিয়ে দুটি কক্ষ করা হয়েছে। সেই দুটি কক্ষ নিয়েই শহীদ মিরাজের বাড়ি। পাশের টিনে ঘেরা বাথরুম। অপর প্রান্তে টিনের চালা দিয়ে সেখানে রান্না করেন শহীদ জননী মোহছেনা বেগম। বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেরাজের পড়ার টেবিলে। এ সময় এই প্রতিবেদককে দেখে মিরাজের মা শহীদ ছেলের বিছানায় বসে ছেলের বালিশের ওপর হাত বুলিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

‎মিরাজের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলে গিয়েছিলেন মিরাজ। সেখানে ভাড়া বাসায় থাকত পুরো পরিবার। ঢাকার দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন মিরাজ। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন তিনি। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত মিরাজের আয়েই।



‎গত বছর ৫ আগস্ট হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন মিরাজ। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এ অবস্থায় মিরাজকে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। পরে ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

‎মিরাজের মৃত্যুতে নিভে যায় তাদের সংসারের আলো। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। কষ্টার্জিত টাকায় কেনা পাঁচ শতাংশ জমিতে বাড়ি করার স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু মিরাজের মৃত্যুতে মাঝপথে থেমে যায় সেই স্বপ্ন। জমিটুকুও হয়ে যায় বেদখল। দলিল দিলেও দখল বুঝিয়ে দেননি প্রতিবেশী দুলাল। সে জমি দখলে নিতে থানা-পুলিশ করেও সুফল মেলেনি। হারতে হয়েছে টাকার কাছে। পড়ালেখা শেষে চাকরি করে বেদখল জমি উদ্ধার করে বাড়ি করে তবেই ঢাকা থেকে ফেরার স্বপ্ন ছিল মিরাজের।



‎ছেলের মৃত্যুর শোকে অসুস্থ বাবা আব্দুস ছালাম বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা পান। সেই টাকায় মহিষখোচা বাজারে একটি খাস জমির ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় কয়েকজন। সেই জমিতে দোকান করে ব্যবসা শুরু করেন আব্দুস ছালাম। কিন্তু পুত্রশোকে হঠাৎ তিনিও স্ট্রোক করে মারা যান। আবার অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে যায় মিরাজের পরিবার।

‎উপার্জনক্ষম বড় ছেলে আর স্বামীকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে মিরাজের পরিবার। এই প্রতিবেদকের সামনে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে বেদখলে থাকা পাঁচ শতাংশ জমি উদ্ধারে প্রশাসনের কছে আকুতি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ মিরাজুল ইসলাম মিরাজের মা মোহছেনা বেগম। 

‎শহীদ মিরাজের দাদি সালমা খাতুন বলেন, আগে মিরাজ আমার ওষুধ কিনে দিত, চিকিৎসাসহ দেখভাল করত। তার মৃত্যুর পরে আমার ছেলে আব্দুস ছালাম ওষুধের ব্যবস্থা করত। এখন ছোট নাতি স্কুলের ফাঁকে দোকান করে যা আয় করছে, তা দিয়ে কোনোমতে খাবার জুটছে।



‎শহীদ মিরাজের ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, শোনা যাচ্ছে, শহীদ পরিবারকে লাখ লাখ টাকা  টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে প্রথম দফায় পাঁচ লাখ টাকা আর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা ছাড়া কিছুই পাইনি। আমাদের কেনা জমি বেদখল হয়ে আছে। সেই জমিও উদ্ধার করে দিতে পারেননি সরকারি কর্মকর্তারা। ভাইকে কারা গুলি করল? তা জানতে চাই। চাই দ্রুত খুনিদের বিচার।

মিরাজের মা মোহছেনা বেগম বলেন, বাড়ির জন্য কেনা জমিটুকু দখল পেতে থানা-পুলিশ করেছিল মিরাজ আর তার বাবা। কিন্তু টাকার কাছে তারা হেরে গেছেন।

‎তিনি বলেন, বাজারের সরকারি জমিতে দোকান করার সুযোগ পেয়েছি। সেই দোকান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলছে কোনোমতে। এখন কেউ আমাদের তেমন খবর নেয় না। আমি আদরের ছেলের মৃত্যুর কয়েক মাসের ব্যবধানে স্বামীকে হারিয়েছি। আমার মতো দুঃখী এ দুনিয়ায় নেই কেউ।’- বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

Shera Lather
Link copied!