ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

রেলপথ অবরোধ, ঢাকা-রাজশাহী যোগাযোগ বন্ধ

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
রেলব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)'র অনুমোদন ও পূর্ণ-বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রেলব্লকেড কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর আন্দোলনকারীরা পিছনের অদূরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক সংলগ্ন রেল ক্রসিং অবরোধ করেন।

সকাল ১০টায় উল্লাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও শেষ পর্যন্ত কাজ হয়নি। সকাল সাড়ে ১১টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের অবরোধ আন্দোলন অব্যাহত ছিল।

একই দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ১৮তম দিনে শিক্ষার্থীরা রেলব্লকেড কর্মসূচি পালন করায় ঢাকা ও রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ও ধূমকেতু আন্তঃনগর ট্রেন আটকা পড়ে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী-উত্তরাঞ্চলে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় শিডিউল বিপর্যয়ের পাশাপাশি যাত্রী বিরম্বনা শুরু হয়।

এদিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন, সাবরিনা সালাত ও সুজনা খাতুন সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, দীর্ঘ ৯ বছরেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ হয়নি। নির্মাণ কাজের ডিপিপি ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে সাতবার সংশোধিত হয়ে পাঁচ শত কোটি টাকায় রূপান্তর করা হয়। বিষয়টি গত ২৬ জুলাই একনেক সভায় ওঠার কথা ছিল। শাহজাদপুরের বুড়িপোতা জিয়া মৌজায় সরকারিভাবে একশ একর জমির প্রস্তাবনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করার কথা। সরকারি এ সমস্ত জমির অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে কেউ না কেউ দখল করে আছেন। তাদের পক্ষ নিয়ে চলনবিল সংগ্রাম কমিটির কতিপয় স্বার্থান্বেষী নেতা ও সংগঠক রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়টি যাতে স্থাপিত না হয়, সেজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরে অভিযোগ দেন।

আরও বলেন, ওই চিঠিপত্রের কারণে পরিবেশ উপদেষ্টা ডিপিপি একনেক বৈঠকে ওঠার সময় ভেটো দেন। পরবর্তীতে কৌশলগত বিলম্ব শুরু করতে থাকে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের ডিপিপি অনুমোদনের আগেই ঝুলে যায়। যে কারণে আমরা বাধ্য হয়ে গত ১৮ দিন থেকে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছি। সরকার এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ইতিবাচক সাড়া না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

স্টেশন মাস্টার মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ৯টা ৫ মিনিটে শিক্ষার্থীরা আকস্মিক এসে উল্লাপাড়া স্টেশনে ঢাকা ঈশ্বরদী রেললাইনে অবরোধ করেন। এতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু আন্তঃনগর ট্রেনটি স্টেশনের পূর্ব দিকে জামতৈল স্টেশনে অবস্থান করে। অন্যদিকে, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী বিপরিতমুখী সিল্কসিটি আন্তঃনগর ট্রেন নিরাপত্তার কারণে পশ্চিম দিকের লাহিড়ী মোহনপুর স্টেশন অবস্থান করে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা উল্লাপাড়া স্টেশনের ঢাকা-ঈশ্বরদী রেললাইনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ও অবরোধ করলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি। রেলের নিরাপত্তায় উল্লাপাড়া থানা পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়েছে। তবে অবরোধের কারণে ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি বর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একই দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গত ১৮ দিন থেকে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা দফায় দফায় তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবন সংলগ্ন বগুড়া–নগরবাড়ী মহাসড়কে অবরোধ, পথ নাটক, শেকল ভাঙার গান এবং প্রতীকী ক্লাস আয়োজন করেন।

এরপর তারা হাটিকুমরুল গোলচত্বরে মানববন্ধন ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে থাকে এবং উভয়দিকে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মহাসড়কে নবীন বরণ ও সেমিনার করে। সর্বশেষ তারা উল্লাপাড়া স্টেশনে এসে বুধবার সকালে ঢাকা ঈশ্বরদী রেলপথ অবরোধ করেন।