মৌলভীবাজার শহরের শমসেরনগর রোডের হার্ডওয়্যার ও স্টেশনারি ব্যবসায়ী শাহ ফয়জুর রহমান ওরফে রুবেল (৫৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি ও অন্যান্য আলামতসহ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (১৭ আগস্ট) শ্রীমঙ্গল উপজেলার লইয়ারকুল এলাকা থেকে আসামি জুহেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা পুলিশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ৩৫ মিনিট থেকে ৭:০৫ মিনিটের মধ্যে রুবেলের দোকান ‘এফ রহমান ট্রেডিং’-এ অজ্ঞাতনামা এক বা একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করে তাকে ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার পর রুবেলের পরিবার মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৮, তারিখ: ৯ আগস্ট ২০২৫, ধারা: ৩০২/৩৪)।
পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) নোবেল চাকমা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খায়ের, সদর থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান, তদন্ত কর্মকর্তা মো. মিনহাজ উদ্দিন এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করে দ্রুত তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে পুলিশ ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে এবং প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। একটি অটোরিকশার চালককে শনাক্ত করে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ। পাশাপাশি বিভিন্ন ডিজিটাল প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি সংগ্রহ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর পুলিশ শ্রীমঙ্গল উপজেলার লইয়ারকুল গ্রামের জুহেল মিয়া ওরফে জুয়েলকে (২২) শনাক্ত করে। তার হাতে থাকা একটি ব্যান্ডেজ পুলিশকে তাকে শনাক্তে সহায়তা করে। পরবর্তীতে ১৭ আগস্ট দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জুহেল মিয়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। জুহেল মিয়া আগে মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন, বর্তমানে বেকার এবং হতাশাগ্রস্ত। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেন।
৬ আগস্ট জুহেল মিয়া ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজার শহরে আসেন; কিন্তু সুবিধাজনক পরিস্থিতি না পেয়ে ফিরে যান। পরদিন ৭ আগস্ট বিকেলে আবার শহরে ফিরে কুসুমবাগ থেকে শমসেরনগর রোডের দিকে হাঁটেন। নিরিবিলি কোনো দোকান খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ‘দি নিউ আরপি হার্ডওয়্যার’ থেকে কিছু জিনিসপত্র কেনার পর সুযোগ না পেয়ে পাশের ‘এফ রহমান ট্রেডিং’ দোকানে গিয়ে রুবেলকে একা দেখে ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেন। রুবেল নামাজে থাকার সুযোগে অপেক্ষা করেন এবং পরে ক্রেতা সেজে দোকানের ভিতরে প্রবেশ করেন। দোকানের ক্যাশ থেকে নগদ ১১০০ টাকা নিয়ে ধারালো ছুরির আঘাত করে হত্যা করেন এবং দ্রুত পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তারকৃত জুহেল মিয়ার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডের সময় তার ব্যবহৃত মাস্ক ও জুতা, হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো ছুরি। এ ছাড়া রিকশাচালককে ভাড়া দিতে আসামি যে রক্তমাখা ২০ টাকার নোট দিয়েছিলেন সেটিও জব্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের আগে আসামি ‘দি নিউ আরপি হার্ডওয়্যার’ দোকান থেকে ক্রয় করা ২টি এলবো ও একটি সাসপেনশন গ্লু এবং দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের একটি রক্তমাখা ফাইলও উদ্ধার করা হয়েছে, যা ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের, মৌলভীবাজার সদর থানার ওসি গাজী মো. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন