শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুই দিনে ভারতে ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮টি ট্রাকে এ পরিমাণ ইলিশ পাঠানো হয়। এর মধ্যে বুধবার ভারতে বিশ্বকর্মা পূজার ছুটিতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় কোনো ইলিশ মাছ রপ্তানি হয়নি।
এবার প্রতি কেজি ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ১২.৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি ১ হাজার ৫৩৩ টাকা দরে।
ইলিশ মাছ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ভারতে মোট ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে।
এর মধ্যে: একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ টন করে ৭৫০ টন, ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ৩৬০ টন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন করে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পূজার আগে পদ্মার ইলিশ পেয়ে ভারতীয়রা খুশি হলেও রপ্তানিতে দেশে ইলিশের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। বর্তমানে দেশীয় বাজারে কেজিতে ইলিশের দাম বেড়েছে ৪০০–৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বেনাপোল বাজারের মাছের আড়তে পাইকারিতে প্রতি এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে একই আকারের ইলিশ প্রায় ৫০০–৬০০ টাকা কমে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ ১২.৫ মার্কিন ডলার রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বেনাপোল বাজারের জয় মৎস্য ভান্ডারের মালিক বিকাশ দেবনাথ বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে যেখানে প্রতি কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকার ওপরে, সেখানে ভারতে এক হাজার ৫৩৩ টাকা কেজিতে কীভাবে রপ্তানি হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও জানান, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ দেড় হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
জানা যায়, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় পূজা উৎসব। আর এ পূজা উৎসবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এপারের পদ্মার ইলিশ। সারা বছর ধরে তারা অপেক্ষায় থাকেন পূজার সময় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসবে আর তারা অতিথিদের আপ্যায়নে ইলিশের বিভিন্ন রান্না তুলে দেবেন প্লেটে।
বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘ভারতে দুর্গাপুজো মানে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখা, প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডা আর জমজমাট খাওয়া-দাওয়া। ইলিশ ছাড়া বাঙালির খাওয়া-দাওয়া যেন পরিপূর্ণ হয় না।’
তিনি আরও বলেনত, ‘দুর্গাপুজোর আগেই ভোজনরসিক বাঙালির কাছে সর্বোত্তম মহূর্ত। রেস্তোরাঁ হোক বা বাড়িতে—অষ্টমী বা নবমীর দুপুরে সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা, ইলিশ পাতুরি বা ইলিশ বিরিয়ানি দিয়ে লাঞ্চ না করলে পুজোর আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে যায়। স্বাদে-গন্ধে পদ্মার ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। এবার বাংলাদেশের ইলিশ আসার কারণে পূজায় ইলিশ রসনায় তৃপ্ত হবে বঙ্গ সমাজ, এ কথা বলাই বাহুল্য।’
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টাইন অফিসার সজীব সাহা জানান, ‘এবার আসন্ন দুর্গাপূজায় ৩৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ১,২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারই আলোকে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে।’
তিনি জানান, প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,৫৩৩ টাকা। প্রতিটি ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজির মধ্যে।
তিনি আরও জানান, গত দুই দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৬৩ টন ৮১৮ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন