বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম

ম্যাজিস্ট্রেটের রায় ‘পাল্টে’ দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম

উত্তর গোবদা বাইতুননূর জামে মসজিদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

উত্তর গোবদা বাইতুননূর জামে মসজিদ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ছোট একটি বিষয় নিয়ে এলাকায় বিভেদ দেখা দেয়, যা নিরসনে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে রায় প্রকাশ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ইউএনও)। তার দুই দিন পর পুলিশ কর্মকর্তা এসে উল্টো রায় দেওয়ায় বিভেদ চরম আকার ধারণ করে। বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করে যুবসমাজের ব্যানারে গণপিটিশন দাখিল করেছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের বরাবরে এই গণপিটিশন দাখিল করেন স্থানীয় যুবসমাজ।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের শঠিবাড়ি বাজারে উত্তর গোবদা দাখিল মাদ্রাসার জমিতে গড়ে ওঠা ওয়াক্তিয়া মসজিদ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিভেদ মিটাতে এ ঘটনা ঘটে।

গণপিটিশন ও স্থানীয় প্রবীণরা জানান, ১৯০১ সালে স্থানীয়রা উপজেলার শঠিবাড়ি বাজারে ২০ শতাংশ জমিতে উত্তর গোবদা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারের বিধিমতে জমির পরিমাণ কম হওয়ায় স্থানীয়রা পাশে জমি দান করে মাদ্রাসাটি স্থানান্তরিত করেন এবং পুরাতন মাদ্রাসার মাঠটিকে উত্তর গোবদা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে উত্তর গোবদা বাইতুননূর জামে মসজিদের ৩ শতাধিক পরিবারের মুসল্লি ও শঠিবাড়ি বাজারে আগত হাটুরে মসুল্লিদের নামাজের জন্য ঈদগাহ মাঠের একপাশে একটি ওয়াক্তিয়া মসজিদ গড়ে ওঠে। ওয়াক্তিয়া মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠটি পরিচালনা করছেন উত্তর গোবদা বাইতুননূর জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটি। স্থানীয় মসুল্লিরা ধীরে ধীরে দ্বি-তলা ভবনের কাজ শুরু করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় জসোমুদ্দিনের ছেলে আনিচুর রহমান ৫-৭টি পরিবার নিয়ে এই ওয়াক্তিয়া মসজিদটিকে জামে মসজিদ ঘোষণা করেন, যা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিভেদ হামলা ও মারামারিতে রূপ নেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষ স্থানীয় থানা ও জেলা প্রশাসনে একাধিক অভিযোগ দায়ের করে। এতে জেলা প্রশাসন অনেকটা বিভ্রান্ত হয়।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয়দের এই বিভেদ নিরসনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে গিয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার ও থানা ওসি আলী আকবর। আলোচনা শেষে ইউএনও লিখিত রায় ঘোষণা করে জানান, মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ পূর্বের ন্যায় ওয়াক্তিয়া মসজিদ হিসেবে সকলের জন্য সর্বদাই উন্মুক্ত থাকবে। তা পরিচালনা করতে একটি কমিটি গঠন করতে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ছালেবুজ্জামান প্রামানিককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই রায় সবাই তাৎক্ষণিক মেনে নিলেও পরবর্তীতে আনিচুর রহমানরা বিরোধিতা করেন।

রায়ের বিপক্ষে গেলে আনিচুর রহমান গংরা ১৯ সেপ্টেম্বর উক্ত মসজিদ খোলা থাকলেও রায়ের প্রতিবাদস্বরূপ সড়কে জুম্মার নামাজ আদায় করে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে দুই দিন পর লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) একেএম ফজলুল হক ও ডিবি ওসি সাদ আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনরায় বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইউএনও’র পূর্ব ঘোষিত রায়ের উল্টো রায় ঘোষণা করেন। তাদের রায়ে বলা হয়, ‘ওয়াক্তিয়া মসজিদটি জামে মসজিদ হবে। এর বিরোধিতা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ এতে অপর পক্ষ ক্ষেপে যায়।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দিনের ব্যবধানে পাল্টাপাল্টি রায়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। ফলে দাঙ্গার শঙ্কা বেড়ে যায়। দুই পক্ষই স্ব স্ব রায় বহালের দাবিতে মারমুখী হয়ে ওঠে। বড় ধরনের বিবাদ ও দাঙ্গা এড়াতে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে বৃহস্পতিবার দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়ে স্থানীয় যুবসমাজের ব্যানারে একটি গণপিটিশন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করা হয়।

লালমনিরহাট ডিবির ওসি সাদ আহমেদ বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া সিদ্ধান্ত আমাদেরকে কেউ জানায়নি এবং সড়কে নামাজ আদায়ের বিষয়টি নজরে আসায় আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। স্থানীয়রা আমাদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম ফজলুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার তার দেওয়া সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আনিচুর রহমান নিজে না থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্বের ন্যায় সব বহাল থাকবে এবং সাবেক চেয়ারম্যানকে নতুন করে একটি পরিচালনা কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্তের পরে পুলিশ অফিসার এসে সিদ্ধান্ত পাল্টে দেওয়া দুঃখজনক, যা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মকর্তারা গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা পাল্টাপাল্টির কিছুই নয়। পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি অবগত রয়েছে।’ তবে বিশৃঙ্খলা এড়াতে এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

Link copied!