দীর্ঘ ৭৬ বছর পর অবশেষে সরকারিকরণ হলো চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঐতিহ্যবাহী নাজিরহাট কলেজ। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (ঢাকা) বুধবার (৮ অক্টোবর) এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নাজিরহাট কলেজকে সরকারিকরণের লক্ষ্যে কলেজটির নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর এবং দৈনন্দিন ব্যয় ব্যতীত নগদ ও ব্যাংক সংরক্ষিত অর্থ ব্যয়ের ওপর আগামী ২১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সরকারিকরণের প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিদর্শনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গত ২১ সেপ্টেম্বরের পত্র এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৮ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনা অনুসরণ করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। একইসাথে নাজিরহাট কলেজ সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনের প্রস্তুতি নিতে কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিরহাট কলেজ উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এখানে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও অনার্স পর্যায়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। দীর্ঘদিন ধরে এ কলেজকে সরকারিকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। ২০১৭ সাল থেকে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটিতে সাইন্স পড়ার জন্যে দূরবর্তী জেলাগুলো থেকে ছাত্ররা আসত। সাইন্স ল্যাবের মধ্যে, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের পরেই ছিল এর অবস্থান। এ কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই কলেজে ছাত্ররা পড়তে আসত। বিশেষ করে বরিশাল, ভোলা, সন্দীপ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, টেকনাফের ছাত্রদের খুব আধিক্য ছিল—যার কারণে দূর-দূরান্তের ছাত্ররা কলেজের দিঘি তুল্য বিরাট পুকুর, খেলার মাঠ, বাগান, গাছ-পালার সান্নিধ্য, একাকিত্ব মোছন করত।
এখানে রয়েছে কলেজের বিরাটকায় এলাকা এবং ছাত্রাবাস। প্রতিটি শিক্ষকের জন্যেই কলেজ ক্যাম্পাসে কোয়াটার আছে। এ ছাড়া কলেজের যাতায়াত সুবিধার্থে চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট কলেজ গেইট পর্যন্ত ট্রেনের ব্যবস্থাও রয়েছে। এই ট্রেন দিয়ে শহর থেকে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করত।
কলেটি সরকারিকরণের খবরে এলাকাজুড়ে আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আরও প্রসারিত হবে এবং এলাকার শিক্ষার মানোন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
কলেজে অধ্যায়রত ফিন্যান্স ব্যাংকিং বিভাগ অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘নাজিরহাট কলেজের সরকারিকরণে আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গভীর আনন্দ ও গর্ব অনুভব করছি। এটি শুধু প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, বরং আমাদের স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ। সরকারি মর্যাদায় কলেজটি শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা উন্নত করেছে। ভর্তি ফি কমবে, বৃত্তি ও অবকাঠামো উন্নত হবে এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। এটি শুধু কলেজের নয়, পুরো এলাকার শিক্ষার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’
কলেজটি সরাকরি হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারাও খুশি। স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি সরকারিকণ হয়েছে শুনে খুশি হলাম। কলেজটি সরকারি হওয়ায় আমাদের প্রজন্ম এর সুয়োগ-সুবিধা পাবে। এ কলেজের সার্বিক সফতা কামনা করি।’
কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হামিদ সোহেল বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, শুকরিয়া মহান আল্লাহর, প্রাচীনত এই কলেজ অনেক আগেই সরকারি হওয়া প্রয়োজন ছিল। যাক, দেরিতে হলেও এই কলেজ সরকারি হলো। যার একান্ত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় এই কলেজ সরকারি হলো তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, আমরা কলেজ পরিবার উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সাথে সাথে যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, এই কলেজ সরকারি হওয়ার ফলে এই অঞ্চলের বিশাল শিক্ষার্থী বিশেষ করে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন