বরিশালে অপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৫ শতাধিক কর্মচারীকে আকস্মিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিন দিনের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে তাদের বাসায় চাকরিচ্যুতির নোটিস পৌঁছে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ চাকরি হারানোর ঘটনায় সংক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা টানা পাঁচ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
রোববার (২ নভেম্বর) সকালেও চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা শহরের বগুড়া রোডস্থ প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে প্রতিবাদস্বরূপ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরাও অংশ নেন।
এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল না করা হলে মহাসড়ক অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই স্টেরিপ্যাক বিভাগের শ্রমিকদের তিন দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই ছুটির মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর প্রত্যেক শ্রমিকের বাসায় ডাকযোগে চাকরিচ্যুতির নোটিস পাঠানো হয়। প্রতিষ্ঠানের এমন অমানবিক আচরণ শ্রমিকদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
চাকরিচ্যুতির নোটিস পাওয়ার এক দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা বগুড়া রোডস্থ অপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছেন।
একাধিক শ্রমিকের অভিযোগ, স্টেরিপ্যাক বিভাগে কর্মরত ৫ শতাধিক শ্রমিকের প্রত্যেকের বেতন ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা ছিল। কর্তৃপক্ষ তাদের বরখাস্ত করে কম বেতনে নতুন কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
ছুটির মধ্যে ডাকযোগে নোটিস পাঠিয়ে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাসদ বরিশাল জেলা সমন্বয়কারী ডা. মনিষা চক্রবর্তী। গত শনিবার ও রোববার চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি অংশ নেন।
বরিশালে দীর্ঘদিন শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা এই নারী নেত্রী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আকস্মিক চাকরিচ্যুতির নোটিস দেওয়া শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অমানবিক উদাহরণ। শ্রমিকেরা তাদের অধিকার রক্ষায় মাঠে নেমেছেন। তিনি তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। যদি শিগগির শ্রমিকদের চাকরিতে ফেরানো না হয়, তাহলে মহাসড়ক অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে অপসোনিনকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
আকস্মিক শ্রমিক ছাঁটাই ও প্রতিবাদ আন্দোলন নিয়ে জানতে রোববার বিকেলে অপসোনিনের বরিশাল অফিসে ফোন করা হলে পারভেজ নামের জনৈক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করলেও তিনি গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের এই প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমুর স্বজন আবদুস সবুর খানের। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দিনে খরচ কমাতে স্টেরিপ্যাক বিভাগের কর্মচারীদের বাদ দিয়ে কম বেতনে কর্মী নেওয়া হতে পারে। এমন অভিযোগ চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরাও গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন