যশোর মেডিকেল কলেজের (যমেক) ফরেনসিক বিভাগে শিক্ষক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে তিন জন প্রভাষক দিয়ে এই বিভাগের কার্যক্রম চলছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে শূন্য রয়েছে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ। সহকারী অধ্যাপক পদে একজন থাকলেও তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে। এ পদে নতুন সংযুক্তি করা হলেও তিনি কর্মস্থলে আসেন না। বর্তমানে শিক্ষক সংকটের কারণে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি খুঁড়িয়ে চলছে। এতে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে ময়নাতদন্ত কার্যক্রমে দুর্ভোগ বেড়েছে।
কলেজের প্রশাসনিক সূত্রে জানিয়েছে, যমেকে ফরেনসিক বিভাগে ছয় জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এগুলো হলো অধ্যাপক পদ ১টি, সহযোগী অধ্যাপক ১টি, সহকারী অধ্যাপক পদ ১টি ও প্রভাষক পদ ৩টি। ৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত ছিলেন চার জন। তারা হলেন সহকারী অধ্যাপক ডা. বাবুল কিশোর বিশ্বাস, প্রভাষক ডা. মোসা. রাজিয়া আক্তার, ডা. শামীমা শিরীন ও ডা. রিংকি মজুমদার। ডা. বাবুল কিশোর বিশ্বাসকে দুই মাস আগে রংপুর মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সহকারী অধ্যাপক পদে ডা. রাজিবুল ইসলামকে সংযুক্তি করা হলেও তিনি রংপুর থেকে কর্মস্থলে আসেন না। কারও সাথে কোনো যোগাযোগ করেন না। বিভাগ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করলেও সাড়া মেলে না। ফলে সহকারী অধ্যাপক পদও শূন্যের থাকার মতো অবস্থা। এদিকে, কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে কেউ যোগদান করেননি।
জানা গেছে, সহকারী অধ্যাপক ডা. বাবুল কিশোর বিশ্বাস মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত ও পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রস্তুত করতেন। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে একমাত্র তিনি এই দায়িত্ব পালন করতেন। প্রতিমাসে ১৫ থেকে ১৬ লাশের ময়নাতদন্ত করতেন তিনি। তার বদলির পর ফরেনসিক বিভাগের কেউ এখন ময়নাতদন্ত বিভাগে নেই। জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে লাশের ময়নাতদন্ত করতে হচ্ছে একই মেডিকেল অফিসারের। জরুরি বিভাগের ছয় জন মেডিকেল অফিসার রোস্টার অনুযায়ী ডিউটির ফাঁকে লাশের ময়নাতদন্তের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ফলে একদিনে রোগী ভর্তিতে বিলম্ব, অন্যদিকে লাশের ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একই সময়ে একজন চিকিৎসক দুই স্থানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা লাশের ময়নাতদন্ত করবেন। কিন্তু এই নিয়মের কোনো বালাই নেই। যশোর মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক বিভাগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক সংকটের কারণে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার দিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত করানো হচ্ছে।
এই বিষয়ে সদ্য বদলিকৃত সহকারী অধ্যাপক ডা. বাবুল কিশোর বিশ্বাস মুঠোফোনে জানান, যমেকের ফরেনসিক বিভাগে বরাবরই শিক্ষক সংকট। সংকটের মধ্যে থেকে বিভাগটি অনেক কষ্ট করে পরিচালনা করা হতো। তারা চার জন মিলে ৫৬ শিক্ষার্থীর পাঠদান করাতেন। তিনি বদলি হয়ে আসার পর তিন জন প্রভাষককে অতিরিক্ত চাপ নিতে হচ্ছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আবু হাসনাত মো. আহসান হাবীব জানান, সংকটের মধ্য দিয়ে ফরেনসিক বিভাগ পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হাঁপিয়ে উঠছেন প্রভাষকরা। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক না থাকার কারণে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন