কেউ ধান কাটছেন, কেউ বস্তাবন্দি করছেন, আবার কেউ বা সিদ্ধ করে রোদে শুকাচ্ছেন—এমন দৃশ্যই এখন দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায়। চলতি মৌসুমের আমন ধান কাটা শুরু হওয়ায় গ্রামে গ্রামে চলছে ধান কাটা-মাড়াই উৎসব। কৃষকের পাশাপাশি কৃষানিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজে।
এ মৌসুমে ধান আবাদের পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্ধারিত সময়েই ধান পাকতে শুরু করে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক-কৃষানিদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে প্রায় ৪ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আমন ধান রোপণের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে ৯০০ জন কৃষককে ৫ কেজি ধানের বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার এবং ১০ কেজি ডিএপি সার প্রণোদনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মাঠে ফলন বৃদ্ধির জন্য সার্বিক সহায়তাও দেওয়া হয়।
সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ সোনালি ধানের সমারোহ। জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাটাই, মাড়াই আর রোদে শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষক মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করি। কৃষি অফিস থেকে সার ও বীজ পেয়েছি। তিন বিঘার ধান কাটা হয়েছে, বিঘায় পেয়েছি ১৮ মন করে। শ্রমিক সংকট থাকায় ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ পরিবারের সদস্যরা মিলে করছি। ফলন ভালো হওয়ায় কাজের মধ্যেই আনন্দ।’
কৃষক দারু মিয়া বলেন, ‘এবার এক বিঘা জমিতে ব্রি-১০৩ জাতের ধান করেছি। কৃষি অফিস সার-বীজ দিয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় বিঘায় ২১ মন ধান পেয়েছি। এখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলে ধান শুকাচ্ছি—এই কাজের আনন্দই অন্যরকম।’
গৃহিণী আসমা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে গাছপালা বেশি থাকায় রোদ কম পড়ে। তাই ধান শুকাতে সমস্যা হয়। এখন মেশিনে ধান কেটে সিদ্ধ করার পর খোলা জায়গায় নিয়ে রোদে শুকাচ্ছি। শীতের রোদে কষ্ট কম হয়। নিজের ধান শুকিয়ে ঘরে তোলার আনন্দ আলাদা।’
কৃষক মো. সাচ্চু মিয়া বলেন, ‘গেল বোরো মৌসুমে ৬ বিঘায় ধান করে লাভবান হয়েছিলাম। তাই এবার কৃষি অফিসের সহায়তায় ৫ বিঘায় ধান করি। সব জমির ধান কম্বাইন হারভেস্টারে কেটেছি। বিঘায় খরচ পড়েছে ২ হাজার টাকা। এই মেশিনে ধান কাটা-মাড়াই-ঝাড়া-বস্তাবন্দি সব একসঙ্গে হয়ে যায়। শ্রমিক দিয়ে করলে দুই দিন লাগে, খরচও বেশি হয়। কিন্তু হারভেস্টারে ২৫-৩০ মিনিটেই বিঘা শেষ। এতে সময়-টাকা—দুটোই বাঁচছে। উচ্চ ফলনশীল ধান হওয়ায় বিঘায় ২০ মন ফলন পেয়েছি।’
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এ উপজেলায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন খুব ভালো। মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন কৃষকরা শ্রমিকের পাশাপাশি কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করায় কাজ দ্রুত হচ্ছে।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন