ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কারণ জানালেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। একই সাথে উঠে এসেছে ১৭ বছর পদোন্নতি না পাওয়ার কারণ।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই চিকিৎসককে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর।
এ বিষয়ে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমরা সবসময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি যে, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে এই ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এ পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা বা কেউ কারো সঙ্গে মিসবিহেব করেনি, ক্যাজুয়ালটিতে ভাঙচুর হয়েছে, কিন্তু কোনো কিছু এ রকম হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব সুষ্ঠুভাবেই পরিচালনা করেছি। আমাদের পরিচালক, সহকারী পরিচালক এবং ডেপুটি ডিরেক্টরে তত্ত্বাবধানে আমরা খুব সুন্দরভাবেই কাজ চালাচ্ছি। ডিজির কাছ থেকে গুরুজনের মতো ব্যবহার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এসে কী কী সমস্যা, সেগুলো জানতে না চেয়ে ভেতরে কেন টেবিল, এ নিয়ে কথা বলেছেন।’
ডা. ধনদেব আরও বলেন, ‘আমার কিন্তু চাকরি বেশিদিন নাই। আর এক বছর পরেই আমি পিআরএলে চলে যাব। আমি অনেক সিনিয়র ২০১৩-তে এমএস করছি, আমাকে ২০২৫-এ সহকারী অধ্যাপক করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘জেনারেল সার্জারিতে অপারেশন থিয়েটারে, হাসপাতালের ভেতরে কোনো অপারেশন করার এখনো আমার সৌভাগ্য হয়নি বা দুর্ভাগ্য হয়নি আমার। যেটাই হোক, এই যে প্রেক্ষাপট এটার জন্য দায়ী আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের অবহেলা। মানে আমাদের এরকম আরও ম্যানপাওয়ার আছে, যেগুলো আমরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ। সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় কাজে আমরা দিতে পারি না।’
চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘হ্যাঁ আমি সাব-সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত উঠে আসছি। সাব-সেন্টারে দেখি যেকোনো ওষুধপত্র চুরি হয়ে যায়। যেকোনো কাজ করতে গেলে পয়সা দিতে হয়। সব জায়গায় দুর্নীতি, এসব চিন্তা-ভাবনা করে আমার আসলে কাজ করার আর মানসিকতাই নাই। আমি সাসপেনশন চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করতে চাই না। এদের চালানোর মতো মনমানসিকতা নাই। স্বাস্থ্যসেবাটা পুরাটাই একটা উদ্ভট ইয়াতে চলতেছে। আর স্বাস্থ্য দ্বারা যারা রাজনীতি করেন, পলিটিক্স করেন, তারাও পলিটিক্সের সময় এলে খোঁজ নেয়। তারপর আর কোনো আলোচনা হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব নিয়ে আর গবেষণাও এদেশে সঠিকভাবে হয় না। ফলস একটা জায়গা নীলক্ষেতে ওখানে সবাই রিসার্চ পেপার জমা দেয়, জমা দিয়ে এগুলো করে সত্যিকারের কোনো রিসার্চই হয় না; স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণটাই একটা ভ্রান্তির মধ্যে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো দেখে খুব ত্যক্ত বিরক্ত এবং এই লোককে আমি গুরুজনের মতো মনে করছিলাম যে আমাদের গাইডলাইন দেবেন। উনি এসে বলেন যে এটা কি, সেটা কি, টুল কেন নাই এই নাই। উনি এসে বলবেন আপনার কি কি দরকার তাহলে আমি জরুরি কিছু যা যা দরকার জানাতে পারতাম। তাহলে আমরা আরও আপগ্রেডেডভাবে কাজটা করতে পারি।’
ডা. ধনদেব আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন আসি, কোনো সমস্যা হলে রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকেও ছুটে আসি। এগুলোর কোনো মূল্যায়ন হয় না। উনি বায়োমেট্রিক নিয়ে চিন্তা করে। বায়োমেট্রিক দিয়ে আমাদের কী হবে? ২৪ ঘণ্টাই আমরা আসি। ২৪ ঘণ্টায় আমরা রিলেটেড থাকি। আমারে বিহেব শিখান, আমার লাইভ শেষ। এখন আমার চাকরি শেষের দিকে আজকে আমার ফ্রেন্ড সবাই প্রফেসর হয়ে গেছে বিভিন্ন সেক্টরে। আমার বিভিন্ন কারণে হয়নি, ট্রেনিং পোস্ট পাইতে পাঁচ বছর দেরি করতে হইছে আমাকে।’
এর আগে,স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানোর অভিযোগে শনিবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণের ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ; যার জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন