বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মেনক্য মেনকক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিফুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে মাসের পর মাস অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বালুমহাল দখল করতে গিয়ে মারামারির ঘটনায় আসামি হয়েছেন ওই শিক্ষক।
স্থানীয় উন্নয়ন কর্মী রিংয়ে ম্রো ও রাইতং ম্রো বলেন, ‘শিক্ষক আরিফুল্লাহ কবে স্কুলে গেছেন ওই শিক্ষকও বলতে পারবেন না। স্কুলে উপস্থিত না থাকলেও উপরস্থ সবাইকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে আছেন এখনও। মাসে একবার এসে শুধুমাত্র হাজিরা ও বেতন খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। বাকি সময় তিনি অবস্থান করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় নিজ এলাকায়।’
তারা আরও বলেন, ‘যেখানে তিনি অবৈধ বালুর ব্যবসা ও রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িত বলে জানা গেছে। উক্ত শিক্ষক শিক্ষার আলো না ছড়িয়ে, অবৈধ বালু ব্যবসায় জড়িত। তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না। কারণ এমন শিক্ষকরা উপরস্থ কর্তাদের পকেটে রেখেই অনিয়মগুলো করেন।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তমাস ত্রিপুরা বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেন।’
রাজস্ব খাতের শিক্ষকরা জানান, ‘ইউএনডিপি স্কুল জাতীয়করণ হওয়ার সময় তার ভাই তৎকালীন এই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত ছিল। সেই সুযোগে তার ভাইসহ বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনকে আলীকদম উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন আওয়ামিলীগ নেতাদের ম্যানেজ করে। স্কুল জাতীয়করণ হওয়ার পরও তিনি স্কুলে একদিনের জন্য আসেননি। শিক্ষক জাতীয়করণ হওয়ার বছর খানেক পর বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি হলে কিছু দিন আসলেও তারপর আবার অনিয়মিত।’
তারা আরও বলেন, ‘আগত শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি চলেন। তা ছাড়া তার ভাই শিক্ষা অফিসের কর্মচারী। আলীকদম না থাকলেও জেলা শিক্ষা অফিসে তার একটি সিন্ডিকেট আছে। শিক্ষক হিসেবে আমরা লজ্জিত এমন শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডে।’
আলীকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লোহাগাড়া স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি এলাকায় জামাত-শিবিরের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। কিছুদিন আগে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে বালুর মহাল দখল করতে গিয়ে মারামারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে লামা থানায় একটি মামলা হয়।
এ ছাড়াও ৫ সেপ্টেম্বর লামার আজিজনগর ইউনিয়ন যুবদল নেতাকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হয় লোহাগাড়া থানায়। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পলাতক রয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম। গত সপ্তাহে যেতে পারিনি, কারণ আমি জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম। কেউ আমার ক্ষতি করার জন্য ভুল তথ্য দিচ্ছে।’
বান্দরবানের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’