কয়েলের একটি ছোট আগুন থেকেই হয়ে গেছে একটি পরিবারের সব আশা, সব স্বপ্ন। গত বুধবার (৯ জুলাই) গভীর রাতে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রচণ্ড গরমে ঘুম হচ্ছিল না ইতি বেগমের। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে কয়েল জ্বালান তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘরের এক কোণে জমে থাকা গ্যাসের লিকেজ থেকে সেই আগুনে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে।
সেই আগুনে দগ্ধ হন ইতি বেগম, তার স্বামী মো. রিপন এবং তাদের সাড়ে তিন বছরের একমাত্র কন্যা শিশু রাফিয়া। প্রতিবেশীরা ছুটে এসে যখন উদ্ধার করেন, তখন শরীরজুড়ে আগুনে পুড়ার ক্ষতচিহ্ন। তখন ছোট্ট রাফিয়া চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে ‘বাবা, আমার গা পুড়ছে।’
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, তিনজনের শরীরেই গুরুতর দগ্ধের চিহ্ন ছিল। ইতির শরীরের ৪৮ শতাংশ, রিপনের ৭০ শতাংশ এবং ছোট্ট রাফিয়ার ৯০ শতাংশ পুড়ে যায়। সবাইকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
দগ্ধ হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে ইতি বেগম মারা যান। তার কিছুক্ষণ পর, সন্ধ্যায় চলে যান রিপন। চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করলেও শনিবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে তিনটার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় শিশু রাফিয়া।
রাফিয়ার বাবা রিপন ছিলেন একটি দর্জির দোকানের কর্মচারী। সীমিত আয়ে চললেও মেয়েকে নিয়ে ছিল তার অনেক স্বপ্ন। আদরের মেয়েকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন, সেই ভালোবাসা,সব কিছু মাটিচাপা পড়ে গেল আগুনের তাণ্ডবে।
সাড়ে তিন বছরের রাফিয়া, যে এখনো ‘মা’ ডাক শিখে উঠতে পারেনি, যে পুতুল খেলার দুনিয়া থেকে ছুটে এসে বাবার কোলে বসে গল্প শুনতো, সে আর নেই। নিভে গেল তার ছোট্ট পৃথিবী, থেমে গেল একটি পরিবারের সব গল্প।