এবারের উইম্বলডন শুরু থেকেই অঘটনের জন্ম দিয়েছে। প্রথম দুই রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছেন ৩৬ জন বাছাই তারকা, যা গ্র্যান্ড স্লামের ইতিহাসে এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
সেই অঘটনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই মেয়েদের সেমিফাইনালে শীর্ষ বাছাই আরিনা সাবালেঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আমান্ডা অ্যানিসিমোভা।
আজ উইম্বলডনের মেয়েদের এককের ফাইনালে তার মুখোমুখি হচ্ছেন সাবেক নাম্বার ওয়ান পোল্যান্ডের ইগা শিয়াতেক। এই ফাইনালকে ঘিরে টেনিসপ্রেমীদের মনে একটাই প্রশ্ন, কে কাকে অবাক করবে?
শিয়াতেক ফেভারিট কিন্তু স্বস্তিতে নন
ইগা শিয়াতেকের এটি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল। এর আগে খেলা পাঁচটি ফাইনালেই তিনি শিরোপা জিতেছেন। পরিসংখ্যানের বিচারে তিনি যে আজকের ফাইনালের ফেভারিট, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে শিয়াতেক নিজে এই ফেভারিট তকমা নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। ঘাসের কোর্টের উইম্বলডনে এর আগে কখনোই কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি।
তার কল্পনায়ও ছিল না যে তিনি উইম্বলডনের ফাইনাল খেলবেন। সেমিফাইনালে সুইস প্রতিযোগী বেলিন্ডা বেনচিচকে মাত্র ৭১ মিনিটে ৬-২, ৬-০ গেমে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠার পর নিজের বিস্ময় গোপন করেননি তিনি, সত্যি বলতে, আমার কল্পনায়ও ছিল না উইম্বলডনের ফাইনাল খেলব।
তাই আমি রোমাঞ্চিত এবং নিজেকে নিয়ে গর্বিত। জানি না কেন টেনিস বারবার আমাকে অবাক করে।
অ্যানিসিমোভা: স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে চমক দেখাবেন?
অন্যদিকে, আমান্ডা অ্যানিসিমোভার জন্য এটি ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল। সেমিফাইনালে শীর্ষ বাছাই আরিনা সাবালেঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর তিনিও বিস্মিত হয়েছিলেন।
ফাইনালে উঠে তার শুরুতে বিশ্বাসই হচ্ছিল না, সত্যি বলতে, ঘোরের মধ্যে রয়েছি। জানি না কীভাবে জিতে গেলাম।
প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল হলেও অ্যানিসিমোভার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। কুইন্স ওপেনে দারুণ পারফরম্যান্স তাকে ঘাসের কোর্টে অভ্যস্ত করে তুলেছে।
শিয়াতেক নিজেও অ্যানিসিমোভার খেলার প্রশংসা করে বলেছেন, নিশ্চয় ও খুব ভালো খেলে। উইম্বলডনের আগেও সে দারুণ একটা টুর্নামেন্ট (কুইন্স ওপেন) খেলেছে।
ঘাসের কোর্টে কীভাবে খেলতে হয়, সেটা ও জানে। ওর খেলার ধরনটা এই কোর্টের সঙ্গে বেশি মানানসই। তাই ওর বিপক্ষে খেলা হবে চ্যালেঞ্জিং।
কে গড়বেন ইতিহাস?
পেশাদার সার্কিটে এই প্রথম একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছেন শিয়াতেক ও অ্যানিসিমোভা। আজকের ফাইনালের ফলাফল ইতিহাসের পাতায় নতুন কিছু সংযোজন করবে।
যদি শিয়াতেক জেতেন
গ্র্যান্ড স্লামে এটি হবে তার ১০০তম জয়। ২০০৪ সালে সেরেনা উইলিয়ামসের পর গ্র্যান্ড স্লাম ম্যাচে দ্রুততম ১০০ জয় পাওয়ার কীর্তি গড়বেন তিনি।
উন্মুক্ত যুগের উইম্বলডনে তিনি হবেন প্রথম পোলিশ চ্যাম্পিয়ন। ২০১২ সালে অগ্নিয়েস্কা রাধওয়ানস্কা ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেননি।
মার্গারেট কোর্ট ও মনিকা সেলসের পর উন্মুক্ত যুগের তৃতীয় নারী প্রতিযোগী হিসেবে প্রথম ছয় গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালের ছয়টিতেই জিতবেন।
যদি অ্যানিসিমোভা জেতেন
২০১৬ সালে সেরেনা উইলিয়ামসের পর তিনিই হবেন উইম্বলডন জয়ী প্রথম আমেরিকান নারী প্রতিযোগী। গত ছয় বছরে উইম্বলডনের ফাইনালে ওঠা প্রথম আমেরিকানও তিনি।
২০২৩ সালে ২১ বছর বয়সে সেরেনার উইম্বলডন জয়ের পর ২৩ বছর বয়সী অ্যানিসিমোভা হবেন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন কনিষ্ঠ আমেরিকান।
১৯৯০ সালের পর জিনা গ্যারিসন, ম্যারিওন বার্তোলি এবং সাবিনে লিসিস্কির দেখানো পথেই এক নম্বরকে হারিয়ে নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে অ্যানিসিমোভা জয় তুলে নেবেন।
আজকের উইম্বলডন ফাইনাল একদিকে অভিজ্ঞ শিয়াতেক বনাম চমক জাগানো অ্যানিসিমোভা, অন্যদিকে রেকর্ড গড়ার হাতছানি।