প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কর্মকর্তা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রভাবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের দাবি, এই কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগে সরকারের নিরপেক্ষতা ব্যাহত করছেন এবং প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছেন।
গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জামায়াতের প্রতিনিধিদল এ অভিযোগ তোলে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রায় এক ঘণ্টা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর কিছু সদস্য বিএনপির হয়ে কাজ করছেন এবং তারা প্রধান উপদেষ্টাকে নানা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন।
তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার পাশে কিছু লোক আছেন, যারা আপনাকে বিভ্রান্ত করেন এবং একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করেন বলে আমরা মনে করি। আপনাকে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
জামায়াতের দাবি, ইলেকশন কমিশন, সচিবালয় ও পুলিশ প্রশাসনের ৭০–৮০ শতাংশ কর্মকর্তা একটি দলের আনুগত্য করেন।
তাহের বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন এটা ৮০ না, ৬৫ শতাংশ। কিন্তু ৬৫ হলেও সেটা অনেক বেশি। একটি দল যদি ৬৫ শতাংশ হয়, আর বাংলাদেশ ৩৫ শতাংশ হয়, তাহলে এটা বড় ভারসাম্যহীনতা।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক শেষে জামায়াত নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
জামায়াত জানায়, তারা বিএনপির হয়ে কাজ করা কয়েকজন উপদেষ্টার নামের তালিকা এবং সচিব পর্যায়ের ৪০ জন কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করেছে। তবে বৈঠকে পরিবেশ উপযুক্ত না থাকায় তালিকা দুটি প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়নি; পরে তা পাঠানো হবে।
বৈঠকে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, গণভোট এবং সংবিধানের বাইরে বিশেষ ব্যবস্থা (‘এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’) নিয়ে আলোচনা হয়। জামায়াত প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে, জুলাই সনদকে একটি আদেশের মাধ্যমে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। তাহের দাবি করেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন।’
এর আগের দিন বিএনপিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিল। ফলে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে দুই দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব মতামত দেবে, এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। তবে আমরা চাই সরকার প্রশাসনকে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করুক।’