বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম

বেতাগীতে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগে ভিজিডির চাল বিতরণ বন্ধ

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম

চাল ওজন করা হচ্ছে।          ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চাল ওজন করা হচ্ছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নে ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচির চাল বিতরণে নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত প্রতি অসচ্ছল পরিবারের জন্য ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও, বাস্তবে তাদের হাতে পৌঁছেছে মাত্র ২২ থেকে ২৩ কেজি। এ গুরুতর অনিয়মের কারণে এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে অবশেষে উপজেলা প্রশাসন চাল বিতরণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণ কার্যক্রমে ব্যাপক কারচুপি চলছে। উপকারভোগীদের হাতে যে চালের বস্তা তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ওজন করে দেখা গেছে কোথাও ২২ কেজি, কোথাও বা সাড়ে ২৩ কেজি। অথচ সরকারি কাগজে-কলমে প্রত্যেক সুবিধাভোগীর জন্য নির্ধারিত ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ রয়েছে। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটানো এসব পরিবারের কাছে ভিজিডি চালই তাদের সাময়িক অর্থনৈতিক সহায়তার অন্যতম ভরসা। এমন পরিস্থিতিতে ৭ থেকে ৮ কেজি চাল কম পাওয়ায় অনেকেই হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গ্রামীণ জনপদের অসচ্ছল মানুষের জীবনযাত্রায় ভিজিডি প্রকল্প একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি। কিন্তু এই সহায়তা যখন দুর্নীতির শিকার হয়, তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। বিবিচিনি ইউনিয়নের এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

সচেতন মহলের মতে, এই অনিয়ম বন্ধ না হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং অসহায় মানুষের প্রতি অবিচার বাড়তে থাকবে। তারা দ্রুত এই অনিয়ম রোধ করে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিতরণের জন্য কঠোর নজরদারি চালুর দাবি জানিয়েছেন।

৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. ইউসুফ আকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি বস্তায় ৩০ কেজির পরিবর্তে ২৩ কেজি চাল থাকায় মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র মানুষের অধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে। আমি দ্রুত অনিয়ম রোধ করে স্বচ্ছতার সাথে চাল বিতরণের দাবি জানাচ্ছি।

চাল বিতরণে ঘাটতির অভিযোগ স্বীকার করে বিবিচিনি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শিশির চন্দ্র বলেন, কোথাও কোথাও ঘাটতির অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হবে এবং যেসব উপকারভোগী চাল কম পেয়েছেন, তাদের সঠিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নওয়াব হোসেন নয়ন তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার উপস্থিতিতে কোনোপ্রকার অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। তবে যদি কোথাও চালের ঘাটতি থেকে থাকে, তা হয়তো পরিবহন বা বস্তা গোছানোর সময় কম-বেশি হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

প্যানেল চেয়ারম্যান রিয়াজ সিকদার বলেন, ‘ইউনিয়নের মানুষের আস্থা নষ্ট হওয়ার মতো কোনো ঘটনা আমরা ঘটতে দিতে চাই না। চাল কম দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ অনিয়ম করে থাকে, তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

ভিজিডি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন উল্লেখ করে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘যদি সেখানে কম চাল দেওয়া হয়, তবে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। আমি অনিয়মের তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুল হাসিবও এই অনিয়মকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, ভিজিডি কর্মসূচি দরিদ্র মানুষের জন্য বড় সহায়তা। চাল বিতরণে অনিয়ম হলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই কর্মসূচির মাধ্যমে চাল পাচ্ছেন, তাদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, এসব অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, বিবিচিনি ইউনিয়নে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যাদের চাল কম দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের প্রাপ্য চাল অবশ্যই পাবেন। কোনোভাবেই সরকারের সহায়তা থেকে অসচ্ছলদের বঞ্চিত করা যাবে না।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!