ঢাকা শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রূপালী বাংলাদেশে সংবাদ প্রকাশে পর ভিজিডির চাল বিতরণে স্বচ্ছতা আনলেন ইউএনও

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৭:০২ এএম
নিয়ম মেনে ভিজিডি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নে ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) কর্মসূচির ৩০ কেজি চালের মধ্যে সুবিধাভোগীরা পেতেন মাত্র ২২-২৩ কেজি। বাকি ৭-৮ কেজি চাল কোথায় গায়েব হয়, তার কোনো হদিশ ছিল। অভিযোগ ওঠে, কথা ওঠে, আলোচনা হয় কিন্তু সমাধান হয় না। ঠিকই সরকারি বরাদ্দ থেকে ঠকে যান অভাবী মানুষরা। 

তবে জাতীয় দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-এ সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে উপজেলা প্রশাসন। জানা গেছে, এখন মেপে পূর্ণ ৩০ কেজি করেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে স্বস্তি বিরাজ করছে ভুক্তভোগীদের মধ্যে। এছাড়াও আগের বিতরণে যে ৩৬০ কেজি চালের ঘাটতি হয়েছিল, তাও চিহ্নিত করে গুদাম থেকে পূরণ করে দেওয়া হয়েছে, যা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করে।

প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত প্রতি পরিবারের জন্য ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও বিবিচিনি ইউনিয়নের উপকারভোগীরা পেতেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ কেজি। এই গুরুতর অনিয়মের কারণে অসচ্ছল মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ প্রকাশ করে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম। পরে তা প্রশাসনের নজরে আসলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হরেকৃষ্ণ অধিকারী রূপালী বাংলাদেশ-কে জানান, ভিজিডি চাল বিতরণে অনিয়ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ফলে এখন আর কম চাল বিতরণের কোনো সুযোগ নেই; সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য প্রাপ্য পাচ্ছেন।’

তিনি আরও নিশ্চিত করেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১২ বস্তা বা ৩৬০ কেজি চালের ঘাটতি চিহ্নিত হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। এই ঘাটতির বিষয়ে ছুটিতে থাকা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা কর্মস্থলে ফিরলে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ বিতরণ কার্যক্রমে শতভাগ স্বচ্ছতা ও সঠিক ওজন নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (যিনি এই বিতরণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন)।

তিনি রূপালী বাংলাদেশ-কে বলেন, ‘আমরা তিনটি ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করে একাধিক পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে চাল মেপে বিতরণ করেছি। প্রতিটি বস্তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ওজন করার পর দেখা গেছে, আজকের বিতরণে কোনো ঘাটতি নেই। আগের চিহ্নিত ঘাটতি গুদাম থেকে চাল এনে পূরণ করা হয়েছে, যাতে কোনো জনগণ এক ছটাকও কম না পান।’

উপজেলা প্রশাসনের এই দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপে সাধারণ জনগণ দারুণ খুশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুবিধাভোগী জানান, আগে কম চাল পেয়ে তারা খুবই হতাশ ছিলেন, কিন্তু এখন মেপে পূর্ণ ৩০ কেজি চাল পাওয়ায় তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

সচেতন মহল মনে করছে, এই ঘটনা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গণমাধ্যমের সক্রিয়তা ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপের ফলেই দরিদ্র মানুষের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে এবং এটি জনসেবায় জবাবদিহিতার এক শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।