আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে রাস্তায় নামতে ব্যর্থ হয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, পতিত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা বরিশালে সড়ক অবরোধসহ জ্বালাও-পোড়াও করে আলোচনায় আসবে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি বড় ধরনের ধাক্কা দিয়ে বিপাকে ফেলবে।
তবে দলটির নেতাকর্মীরা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাদের গ্রেপ্তার আতঙ্কে দৌড়ের ওপর থাকতে দেখা গেছে। তবে এই সুবর্ণ সুযোগটি লুফে নিতে মোটেও ভুল করেননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। লকডাউনের নামে নৈরাজ্য তৈরি হলে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা শহরময় মহড়া দিয়ে নিজেদের শক্তি জানান দিয়েছেন।
বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত করেছে, ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে বরিশালে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে—এমন আশঙ্কায় দু’দিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। শহরের প্রবেশদ্বারসমূহে ধারাবাহিক চেকপোস্ট বসানোসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের টহল, সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এর আগে ১২ নভেম্বর রাতে পুলিশের একাধিক টিম অপরাধে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালিয়েছিল।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ নভেম্বর তাদের ২ হাজারের বেশি সদস্য মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত ছিলেন। শহরের বিভিন্ন স্থানসহ জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ করে বরিশাল শহরের প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড়া, কালিজিরা এবং দপদপিয়া এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
বিভিন্ন মহল বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কঠোর নিরাপত্তা বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছে। ফলে তারা আর মাঠে নেমে কোনো ধরনের অশান্তি তৈরি করতে চায়নি। তবে এই সুবর্ণ সময়টি কাজে লাগাতে ভুল করেননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলটির মহানগর ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা গত দুদিন ধরে রাস্তায় থাকাসহ কর্মীদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোডাউন করে মিডিয়াতে শিরোনাম হয়েছেন।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, “ঢাকা লকডাউনের নামে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেন কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আমরা মাঠে রয়েছি। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ করে পুলিশকে সহযোগিতা করছি।”
মাঠপুলিশের কর্মীরা জানিয়েছেন, ১৩ নভেম্বরকে ঘিরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা ও নজরদারি ছিল। মেট্রোপলিটনের চারটি থানা আওতাধীন এলাকায় যাতে কেউ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়। নির্ধারিত এলাকায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনে নজরদারি করেছেন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি থাকায় বরিশাল শহরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনো নৈরাজ্য তৈরি করতে পারেননি। তবে বরিশালের উজিরপুরে ইউনিয়ন বিএনপির একটি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে গুঠিয়া ইউনিয়ন বিএনপি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে, তবে এখননো কাউকে আটক করা যায়নি। উজিরপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর বাইরে অন্য কোনো উপজেলায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবুও বিএনপি নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মাঠ নিজেদের দখলে রেখেছেন এবং উপজেলা শহরে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছেন।



