শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

কাঠ-করাতে মুখরিত প্রতিদিন, ভোলায় জমজমাট নৌকাশিল্প

ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

নৌকা তৈরির কারিগররা নিপুণ হাতে নৌকা নির্মাণ করছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

নৌকা তৈরির কারিগররা নিপুণ হাতে নৌকা নির্মাণ করছেন। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ভোলার লালমোহন উপজেলায় অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে নৌকা তৈরির কাজ। উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া কাঠপট্টি এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটান মিস্ত্রিরা।

কাঠ, পেরেক, হাতুড়ি ও করাতের শব্দে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। এখানকার মিস্ত্রিরা তৈরি করেন ডিঙি নৌকা, জয়া নৌকা ও ফিশিং বোটসহ বিভিন্ন ধরনের নৌকা। আকার ও ধরনভেদে এসব নৌকার দাম ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মিস্ত্রিদের ঘাম ঝরা পরিশ্রমে তৈরি এসব নৌকা জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও কক্সবাজার পর্যন্ত।

এই নৌকা তৈরি করে গজারিয়া এলাকার শতাধিক মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। বছরে প্রায় চার মাস এখানে নৌকা তৈরির ধুম পড়ে। যদিও এখানে বড় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, তবু লালমোহনের এই প্রত্যন্ত গ্রাম গজারিয়া বাজারেই তৈরি হচ্ছে নৌকা ও ট্রলার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বীপজেলা ভোলার ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ জলসীমায় মাছ ধরার প্রধান বাহন হলো নৌকা ও ট্রলার। এখানকার দুই লাখের বেশি জেলে এসব নৌকায় ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, উপকূলের দ্বীপচর এলাকায় খেয়া পারাপারেও একমাত্র ভরসা এই নৌকাগুলো। তাই এ জেলায় নৌকার কদর সর্বত্র।

ওই এলাকার মিস্ত্রিরা প্রায় ২০ বছর ধরে দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরিতে নানান ধরনের নৌকা তৈরি করছেন। বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সময়টাতে থাকে বেশি কাজের চাপ। তখন ভালো আয় হলেও বছরের অন্য সময়ে কাজ কমে যায়, অনেক দিন বসে থাকতে হয়।

শ্রমিকরা জানান, ‘আকার ও আয়তনভেদে একেকটি নৌকা তৈরিতে সময় ও উপকরণের প্রয়োজন আলাদা। কোনো নৌকা তৈরি করতে এক সপ্তাহ, আবার কোনোটা ১৫-২০ দিনও লাগে। পুরো কাজ হয় দৈনিক মজুরিভিত্তিতে। গজারিয়া কাঠপট্টিতে প্রায় ১০টি টিম্বার ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা মিস্ত্রিদের নিয়োগ দেন।’

যে নৌকা ১ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, তাতে লাভ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর বড় ধরনের ট্রলার বা ফিশিং বোট যা ৫-৬ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, তাতে লাভ থাকে অর্ধলাখ টাকা মতো। মিস্ত্রি ও কাঠসহ নৌকা তৈরির উপকরণের পেছনে প্রতিটি টিম্বারে রয়েছে লাখ লাখ টাকার পুঁজি, যার বেশিরভাগই এনজিও ঋণ সহায়তায় এসেছে।

নৌকা তৈরির কারিগর মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে নৌকা তৈরি করছি। আগে মজুরি কম ছিল, এখন দৈনিক পাই ৯০০ টাকা করে।’

সোহাগ মিস্ত্রি বলেন, ‘লালমোহনসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন নৌকা কিনতে আসে। এখানেই তৈরি হয়, এখান থেকেই বিক্রি হয়। ছোট আকারের নৌকা গড়ে ৩০-৮০ হাজার টাকা এবং বড় আকারেরগুলো ৫০ হাজার থেকে ৬/৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।’

ফরিদ মিস্ত্রি বলেন, ‘ভালো মানের কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা ১০-১২ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। এখানকার নৌকার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বাইরেও।’

নৌকা ব্যবসায়ী ও পাইকার নুরু ব্যাপারী বলেন, ‘এখানে প্রায় ২’শ জন শ্রমিক নৌকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তাদের জীবিকা চলে এই কাজের মাধ্যমে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। তবে শ্রমিক ও কারিগরদের যদি সরকারি বা বেসরকারি পর্যায় থেকে ঋণের আওতায় আনা হয়, তাহলে এই শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে।’

লালমোহনের এসব নৌকা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। তবে শ্রমিকদের উন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই বলে মনে করেন অনেকে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমদ আকন্দ বলেন, ‘এই সম্ভাবনাময় নৌকা শিল্পের আরও প্রসার ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, সেটি আমরা অবশ্যই করবো।’

Shera Lather
Link copied!