মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম

শেরপুরে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে  অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ১০:৩৪ পিএম

শেরপুরে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে  অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

 

বগুড়ার একটি কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জাকির হোসেনের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে বলে এমন অভিযোগ উঠেছে। শেরপুর টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে এই ঘটনা ঘটেছে। জাকির হোসেন সিরাজগঞ্জের সারটিয়া যমুনা ডিগ্রী কলেজের উপাধাক্ষ।

এ নিয়োগ বাতিলকরণে দাবি তুলে কলেজ গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য গত ৭ মে বগুড়ার জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগকারীরা হলেন- কলেজের গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য পিয়ার হোসেন পিয়ার ও দাতা সদস্য জাহিদুর রহমান টুলু।

জানা যায়, শেরপুর টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরির মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১০ মার্চ দৈনিক কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অধ্যক্ষ পদের জন্য ১৩ জন আবেদন করলেও, গত ৩ মে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ১০জন।

এদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদের যমুনা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন, কাজিপুরের আফজাল হোসেন মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান, বগুড়ার ধুনট মহিলা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম ও বগুড়া আর্মড ব্যাটালিয়াল কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মোস্তফা কামাল উত্তীর্ণ হন।

উত্তীর্ণ এই চারজনের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেছে নিয়োগ নির্বাচনী কমিটি। নিয়োগ কমিটিতে  ছিলেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ (সভাপতি), সদস্য সচিব ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান, সদস্যরা হলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে মাহবুব হোসেন(সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে প্রফেসর শওকত আলম মীর (অধ্যক্ষ, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ) ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারি কমিশনার(শিক্ষা নবিশ) ফয়সাল মাহমুদ। পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদের যমুনা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেনকে প্রথম ঘোষণা করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।

তবে নিয়োগ পরীক্ষার দিনই পরীক্ষায় অনিয়ম নিয়ে গুঞ্জন উঠে। নির্ধরিত সময়ের দুই ঘণ্টা পরে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ও স্বচ্ছতার তকমা লাগিয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে কলেজ ক্যাম্পাসেও প্রবেশেও নিষেধ করা হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা তাদের বাইরে দাড় করিয়ে রাখা হয়। এরপর জানানো হয় পরীক্ষা শেষে তাদের তাদের সব তথ্য সরবরাহ করা হবে।

লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, কলেজের সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান যৌথভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করেছেন। এই কমিটির মাধ্যমে প্রার্থী মো. জাকির হোসেনের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিকে নিয়োগে সুপারিশ প্রাপ্ত মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। তিনি তার বর্তমান কলেজ তহবিলের অর্থ তছরুফ করেছেন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার চেষ্টা করেছন। এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য পিয়ার হোসেন পিয়ার ও জাহিদুর রহমান টুলু বলেন, এই কলেজটি এলাকায় নারী শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এখানে অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম হলে কলেজটির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই আমরা বর্তমান গভর্ণিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অপসারণ করে নুতন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানাই।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ বোর্ড স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন দায় নেই।’

কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ বলেন, ‘পরীক্ষার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রার্থী চুড়ান্ত করা হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।’

অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ( শিক্ষানবিশ) ও নিয়োগ নির্বচনী বোর্ডের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ফয়সাল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, জেলার শেরপুর টাউনক্লাব পাবলিব লাইব্রেরী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন একেএম নুরুল ইসলাম। তার সঙ্গে প্রায় দেড় বছর পূর্বে তৎকালীন কলেজ ম্যানেজিং কমিটির জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু’র অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বনিবনা না হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত হতে হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন একই কলেজের উপাধ্যক্ষ রুহুল আমীন।

এদিকে গত ২০২৪ সালের ৩০ জুন ওই অধ্যক্ষ (সাময়িক বরখাস্তকৃত) এর অবসরে গেলে পদটি শুণ্য হয়। এরপর গত ২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবের পর সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক, সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তবে ১১ আগস্ট কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ভোটারিধকারের ভিত্তিতে এবং জোষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে এ পদে তাকে অধিষ্ঠিত করেন। অন্যদিকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির পরবর্তী সভাপতি নিযুক্ত হন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, শেরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ।

তবে কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যদের বাদ দিয়ে রাতারাতি নিয়ম বহির্ভূতভাবে একটি কমিটি অনুমোদন করিয়ে আনা হয় যাতে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দুর্নীতি কারণে কলেজের সব শিক্ষক ও কর্মচারীরা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে সভাপতি বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু সভাপতি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তার সঙ্গে যোগসাজসে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠে।

Link copied!