ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

ধুনটের সাবেক ওসির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১০:১১ পিএম
ধুনটের সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালা।

বগুড়ার ধুনটে আলোচিত স্কুলছাত্রী ধর্ষণ এবং সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ মামলায় কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামান মুকুল ও মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. জিয়া উদ্দিন মাহমুদ দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম আদালতে ১ হাজার ৫০০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন ধুনট উপজেলার শৈলমারি গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে ও জালশুকা হাবিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুল (৪৮) এবং গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২-এ কর্মরত ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালা (৫১)।

বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর পিপি অ্যাডভোকেট মো. মোজাম্মেল হক চার্জশিট দাখিল ও পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ধুনট পৌর এলাকার অফিসারপাড়ার কলেজশিক্ষক দম্পতির স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন শিক্ষক মুরাদুজ্জামান মুকুল। ওই সময় তিনি ধর্ষণের দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন।

পরদিন ১২ মে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পুলিশ মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে এবং তার মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিওসহ একাধিক আলামত জব্দ করে।

তবে মামলার তদন্তকালে তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আসামির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে জব্দকৃত ফোন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ও অন্যান্য আলামত নষ্ট করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করলে ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে ধুনট থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে; পরে দায়িত্ব যায় বগুড়া পিবিআইয়ের কাছে।

তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই সবুজ আলী সাক্ষীদের প্রকৃত বক্তব্য গোপন করে কৃপা সিন্ধু বালাকে বাদ দিয়ে ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এ অবস্থায় বাদীর নারাজি আবেদন আদালত মঞ্জুর করে ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট বগুড়া পিবিআইকে সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা ছয়বার পরিবর্তনের পর সর্বশেষ বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম দায়িত্ব পান এবং সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে দুই আসামির বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সাক্ষ্য ও প্রমাণে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, মুরাদুজ্জামান মুকুল ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত। অপরদিকে, মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করার অভিযোগে সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালার সম্পৃক্ততাও প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।’