একদিকে রয়েছে চট, তিনদিকে খোলামেলা, মাথার ওপর ছোট একটি টিনের টুকরো। দেয়ালে সাঁটানো আছে আয়না, বসার জন্য আছে একটি কাঠের চেয়ার। টেবিলে রাখা আছে কাঁচি, চিরুনি, কাপড় আর ক্ষুরসহ কিছু জিনিসপত্র। খোলামেলা মন পরিবেশে চুল কাটার কাজ করছেন। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের লালবাজার রেল গেট এলাকায়।
এখানেই তপন শীল নামে এক নরসুন্দর জীবিকার প্রয়োজনে নিত্যদিন চুল কাটার কাজ করছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল পর্যন্ত চলছে এ কাজ। সারা দিন কাজ করে আড়াই শ থেকে ৩শ টাকা আয় করছেন। আর এ আয়ে চলছে তার জীবন।
একসময় নরসুন্দরদের গ্রামের হাট-বাজারে কিংবা বড় রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে চুল কাটতে দেখা যেত। কিন্তু ডিজিটাল এ যুগে সেলুনের দাপটে খোলা আকাশের নিচে নরসুন্দরদের ক্ষৌরকর্মের এই দৃশ্য অনেকটাই বিরল। চুল কাটার এমন দৃশ্য সহসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে তা আজ অনেকটাই স্মৃতিতে রূপান্তরিত। এদিকে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে সর্বস্থানে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। এমনকি চুল কাটাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রিক মেশিনও। সেই সাথে চুল কাটা হচ্ছে ছবি দেখে আলাদা আলাদা স্টাইল বা ডিজাইনে। দ্রুতই হয়ে যাচ্ছে নানাবিধ স্টাইল।
কিন্তু এরপরও ঘুরে ফিরে পূর্বের সেই দৃশ্য লালবাজার রেল গেট এলাকায় দেখা যায়। ডিজিটাল যুগে পূর্বের ন্যায় দীর্ঘ বছর ধরে নরসুন্দরের কাজ করে আসছেন পৌর শহরের রাধানগরের বাসিন্দা তপন শীল। তার পরিবারে স্ত্রী, ২ ছেলে রয়েছে।
তপন শীল বলেন, এ কাজ বাবার কাছে শিখেছি। পরিবারের অভাব-অনটন থাকায় ছোটবেলা থেকেই এ কাজ করছি। একসময় রেলওয়ের জায়গায় রাস্তার পাশে ভাড়া দোকানে এ ব্যবসা করা হতো। তবে দোকান জাঁকজমক ছিল না। ভেতরে কোনো রকম বসে কাজ করা হতো। কয়েক বছর আগে দোকানটি ভেঙে দেয় রেলওয়ে। এরপর থেকে খোলা আকাশের নিচে চুল কাটার কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, দোকান নিয়ে কাজ আর খোলা আকাশের নিচে কাজ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখানে সহজে লোকজন তেমন আসতে চায় না। এখানে মূলত দিনমজুর, শ্রমিক আর নিম্ন আয়ের লোকজন আসে। প্রতিজন থেকে চুলকাটা শেভসহ ৩০ টাকা নেওয়া হয়। আকাশ ভালো থাকলে দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার ওপর আয় হয়।
তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ, টাকা-পয়সা নেই। বর্তমান একটি দোকান ভাড়া নিতে জামানত হিসাবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিতে হয়। এরপর আছে দোকান সাজানো। ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ যোগানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এভাবেই কষ্ট করে কাজ করছি।

