ঢাকা শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

তিল ধারণের ঠাঁই নেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড়। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

আজ শেষ হচ্ছে ঈদের ছুটি। ছুটি শেষের দিন শুক্রবার (১৩ জুন) কক্সবাজার সৈকতে ছিল তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা। প্রায় ৩ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে শুধু পর্যটক আর পর্যটক। সাগরতীর যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে।

দেশের পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন লাখো মানুষ ছুটে আসেন অভাবনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু এই সৌন্দর্যের অন্তরালে লুকিয়ে আছে অজানা এক মৃত্যুঝুঁকি। 

অতিরিক্ত ভিড়, অব্যবস্থাপনা আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে সমুদ্রস্নান অনেক সময় হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। সাগরের নিচে থাকা গুপ্ত খাল, প্রবল স্রোত, আর সীমিত উদ্ধার ব্যবস্থা যেন ভ্রমণ পিপাসুদের মৃত্যু ডেকে আনছে বারবার। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই অব্যবস্থাপনা।

শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলি পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াড়ি কিংবা নোনাজল সব জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ। তীব্র গরমও হার মানছে উৎসবমুখর ভ্রমণপিপাসুদের উচ্ছ্বাসে।

শুধু এই তিনটি পয়েন্ট নয়, পর্যটকে ভরপুর হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক ও মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত এলাকা।

সিলেট থেকে আসা পর্যটক মীর কাশেম আজাদ বলেন, গত তিন দিন আগে কক্সবাজার এসেছি। প্রতিদিনই সাগরে গোসল করেছি। অন্য রকম আনন্দ। এখনো অনেক স্থানে ঘুরাঘুরি বাকি। আজকে এবং শনিবার ঘোরা শেষে শনিবার রাতে সিলেট ফিরে যাব।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে মাত্র সাত দিনেই কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন ৮ লক্ষাধিক পর্যটক। অধিকাংশ পর্যটক একবারের জন্য হলেও সমুদ্রে নামেন। লোনা জলে গা ভাসান। কিন্তু এই আনন্দঘন মুহূর্তের পেছনেই লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর ‘ফাঁদ’।


 
তারা আরও জানিয়েছেন, সৈকতের একাধিক স্থানে গুপ্ত খাল ও গর্তের কারণে পর্যটকদের জন্য সাগরে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকে বুঝতেই পারেন না কখন তারা নিরাপদ এলাকা ছেড়ে প্রবেশ করছেন মৃত্যুঝুঁকির জোনে। অনেক ক্ষেত্রে ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানিও।

কক্সবাজার সী সেইফ লাইফগার্ডের টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সি-সেফ লাইফগার্ডের মাত্র ২৭ জন কর্মী থাকলেও একজন ডুবুরিও নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাকি ১১৫ কিলোমিটার—টেকনাফ থেকে কলাতলী এবং শৈবাল পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যটন সৈকত সম্পূর্ণ অনিরাপদ। যদি কেউ নিখোঁজ হন ওই অঞ্চলগুলোতে, উদ্ধার কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত তিন দিনে সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন পর্যটকসহ অন্তত ৬ জন। গত বছর মারা গেছেন ৫৪ জন। ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিদিন ভেসে যাওয়া বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। এ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছে জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ড।’

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক তাহসিন শাওন বলেন, ‘সমুদ্রে গোসলের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বাদ দিয়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে অন্য জায়গায় নামছেন। ভাটার সময় গোসলে নামা বিপজ্জনক; এ সময় লাল নিশানা ওড়ানো হলেও অনেকে গোসলে নামেন।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানিয়েছেন, ভ্রমণরত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইফগার্ড ও বীচ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য কক্সবাজারে বিলাসবহুল হোটেল-মোটেল হয়েছে অনেক। পর্যটন ঘিরে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে।

কিন্তু গত তিন যুগেও সৈকতের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা নেট দিয়ে ঘিরে পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কবে এই উদাসীনতার অবসান হবে—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।