মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

রাখাইনে সংঘাত তীব্র, দলে দলে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

রোহিঙ্গা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও ভয়াবহ সংঘাত শুরু হয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ) ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে টানা গোলাগুলি, গ্রাম পোড়ানো ও দমন-পীড়নের ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে ঢুকছে।

গত সপ্তাহে আরাকান আর্মির এক লেফটেন্যান্ট সংঘাতের মুখে জীবন বাঁচাতে নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তিনি পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পাশাপাশি ম্রু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারে ঢুকেছেন। সীমান্তবর্তী স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে রাতের আঁধারে বহু পরিবার বাংলাদেশের দিকে ছুটছে।

অন্যদিকে, রাখাইনে আরাকান আর্মির অগ্নিসংযোগে গ্রামভর্তি বাড়িঘর ভস্মীভূত হওয়ার পর নৌকাভর্তি রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্তের ওপারে অপেক্ষায় আছে কয়েকটি তঞ্চগ্যা পরিবারও। ফলে সীমান্ত এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার সলিম উল্লাহ নামে এক জেলে বলেন, ‘প্রতিদিন রাতের আঁধারে নদী দিয়ে নৌকা আসছে। ওদের মুখে শুধু আতঙ্ক—বাড়ি পুড়েছে, আত্মীয়রা মারা গেছে—বাঁচার জন্য পালিয়ে আসতে হয়েছে।’

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর মতে, এ পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীর চাপ বাড়বে এবং স্থানীয় জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার মতে, এই অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র মানবিক সংকট নয়, বরং নিরাপত্তাজনিত হুমকিও বটে। কারণ এদের মধ্যে সশস্ত্র সদস্য ঢুকে পড়তে পারে। তাই কড়া নজরদারি জরুরি।

রাখাইন বহু বছর ধরে মিয়ানমারের সবচেয়ে অস্থিতিশীল অঞ্চল। ২০১৭ সালের সামরিক দমন ও পীড়নে প্রায় সাত থেকে আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, ম্রু, তঞ্চগ্যা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও বাংলাদেশমুখী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘রাখাইনে সংঘাত শুধু জাতিগত নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক। আরাকান আর্মি বর্তমানে রাখাইনের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী লড়াইকে আরও তীব্র করেছে।’

মানবাধিকার কর্মী  অ্যাড. সরওয়ার কামালের মতে, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশাল শরণার্থী বোঝা বহন করছে। নতুন ঢল সামলানো সম্ভব নয়। কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে চাপ দিতে হবে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘রাখাইনে গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও হত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশ্ব সম্প্রদায় দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে নতুন করে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’

সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বিজিবি টহল বাড়িয়েছে এবং নতুন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে যাদের জীবননাশের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের মানবিক দিক বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।

রাখাইনের এই সংঘাত কেবল মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় হুমকি। ইতোমধ্যেই সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এখন জরুরি হলো কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা, না হলে মানবিক বিপর্যয় আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।

Link copied!