কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রহমতবিল সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফের ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে টানা চার ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে এসব গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গভীর রাত পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষের শব্দে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে মো. ইয়াস (২৫) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১২- এর বাসিন্দা। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি রাখাইনের অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া এলাকায় আরাকান আর্মি (এএ) এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা (ARSA) ও আরএসও (RSO)-র মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আরাকান আর্মির দখলে থাকা ব্যারাক ও চৌকি পুনর্দখলের চেষ্টা করছে। এর জেরেই রাতভর গুলিবিনিময় চলে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে রাতে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে রহমতবিল, ধামনখালী, থাইংখালী, বালুখালীসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে হাজারো মানুষ আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন।’
থাইংখালী সীমান্ত এলাকার স্কুলশিক্ষক মো. কমরুদ্দিন জানান, ‘রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দে গ্রামের লোকজন ঘর থেকে বের হননি। সবাই আতঙ্কে ছিলেন গুলি এসে এপারে পড়ে কি না।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, ‘আমরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। নাফ নদী ও স্থলসীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।’
তবে এপারে কোনো গুলি আসেনি বলে জানান তিনি। গুলিতে রোহিঙ্গা যুবক আহত হওয়ার বিষয়ে বিজিবির কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।
সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, ঢেকুবনিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির দখলে থাকা সামরিক ব্যারাক ও চৌকিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো।
মিয়ানমারের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক জান্তা সম্প্রতি ওই এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে আবার অভিযান শুরু করেছে। যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর টানা যুদ্ধ শেষে রাখাইনের মংডু টাউনশিপের ২৭১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় আরাকান আর্মি। এখন সেই এলাকাগুলো পুনর্দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।
এর আগেও চলতি বছরের ৪ অক্টোবর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তখনো সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল।
নতুন করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ফলে সীমান্তজুড়ে আবারও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন