কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যান।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে তিনি উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা, শিক্ষা কার্যক্রম ও মানবিক সহায়তার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেন।
পরিদর্শনকালে ব্যারোনেস চ্যাপম্যান বালুখালী ক্যাম্পের একটি লার্নিং সেন্টার ঘুরে দেখেন এবং সেখানে অধ্যয়নরত রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুদের পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। পাশাপাশি তিনি নারী উদ্যোক্তা ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা গ্রহণকারীদের সঙ্গেও কথা বলেন।
পরে তিনি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং সহায়তার প্রক্রিয়া ও উপকারভোগীদের অভিজ্ঞতা শোনেন।
দুপুরে মধুছড়া এলাকায় গিয়ে সাবান উৎপাদন ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ও এলএসডিএস-এর সহায়তায় পরিচালিত এ প্রকল্পে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করে জীবিকা উন্নয়নে অংশ নিচ্ছেন।
তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
ব্যারোনেস চ্যাপম্যান বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তা ও টেকসই সমাধানে যুক্তরাজ্য শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।
পরিদর্শনে মন্ত্রী চ্যাপম্যানের সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন বিশেষ উপদেষ্টা অ্যামেলি গেরিকে, উপউচ্চকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান, মানবিক সহায়তা দলের প্রধান এলি মুডি, মানবিক উপদেষ্টা মারিনেলা বেবোস-গলশেটি, যোগাযোগ ব্যবস্থাপক শেখ অংকন ও যোগাযোগ কর্মকর্তা সাজিদ হাসান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি), জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওর প্রতিনিধি।
দিনব্যাপী সফরের সমন্বয় করছেন ইন্টার-সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) স্থানীয় সমন্বয়ক ও যোগাযোগ কর্মকর্তা সাইয়েদ মো. তাফহিম।
সূত্র জানায়, ক্যাম্পে মানবিক কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার পর তিনি কক্সবাজার শহরে ফিরে স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান, শিক্ষা সহায়তা জোরদার এবং দাতা সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়।
পরিদর্শনের পুরো সময় জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ব্যারোনেস চ্যাপম্যান বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফিরবেন। তার এ সফরের মূল লক্ষ্য, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তায় চলমান আন্তর্জাতিক কার্যক্রম সরেজমিনে দেখা এবং যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ মানবিক সহযোগিতা নির্ধারণে তথ্য সংগ্রহ করা।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম বড় দাতা দেশ হিসেবে কাজ করছে।


