কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওষুধ কেনাকাটায় চাঞ্চল্যকর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ১০১ টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন ক্রয় করা হয়েছে ১২৯৯ টাকায়, যা নির্ধারিত মূল্যের প্রায় ১৩ গুণ বেশি। এ ঘটনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘এটি আসলে একটি প্রিন্টিং মিসটেক।’ তবে বিষয়টি ঘিরে জনমনে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হাসপাতালের এমএসআর (মেডিকেল ও সার্জিক্যাল রিকুইজিশন) গ্রুপে পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়। এর মধ্যে ‘ইনজেকশন পেনটোথাল সোডিয়াম ১ গ্রাম’ নামক একটি অ্যানেস্থেটিক ওষুধের চার হাজার ভায়েল ক্রয় করা হয়েছে ১২৯৯ টাকা দরে, যেখানে খুচরা মূল্য মাত্র ১০১ টাকা।
হিসাব অনুযায়ী, এই ইনজেকশনের প্রকৃত বাজারমূল্য ৪ লাখ ৪ হাজার টাকা, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা কিনেছে ৫১ লাখ ৯৬ হাজার টাকায়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
পরিচালকের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ জনগণ। অধিকার ফাউন্ডেশন কুমিল্লার প্রধান নির্বাহী আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘প্রিন্টিং মিসটেক বলে এমন দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি এভাবে দায় এড়াতে চান, তার মানে তিনি দুর্নীতি আড়াল করতে চাইছেন।’
হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আবুল খায়ের অভিযোগ করেন, ‘পরিচালক আমাকে না জানিয়েই স্বাক্ষর করেছেন। কেনাকাটার বিষয়ে পরিচালক ও তার সহকারী দেলোয়ার হোসেনই সব জানেন।’
তবে দেলোয়ার হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নিশাত সুলতানা বলেন, ‘এমন প্রিন্টিং মিসটেক স্বাভাবিক নয়। তবে যেহেতু ভুলটি ধরা পড়েছে, তাই আমরা অন্য ওষুধ কিনে টাকা সমন্বয় করেছি।’
এ ঘচটনার পর বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। নিপীড়িত নাগরিক সমাজ, কুমিল্লার ছাত্র-জনতা ও সচেতন এলাকাবাসী’র ব্যানারে পরিচালকের অপসারণ, প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেন এবং বিএনপি-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব কুমিল্লা মহানগর সভাপতি এম এম হাসান-এর অপসারণের দাবি তোলা হয়।
বক্তব্য রাখেন এনসিপি মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. রাশেদুল হাসান ও এবি পার্টির মহানগরের আহ্বায়ক গোলাম মো. সামদানী।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর কুমিল্লা জেলা, মহানগর এবং কলেজ শাখার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ড্যাব মহাসচিব মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।