দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে আগাম জাতের আমন ধান ও শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ভুক্তভোগী কৃষকরা আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন।
ঝড়ো বাতাসে নুয়ে পড়ে আগাম জাতের পাকা ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। একইভাবে জমিতে লাগানো আগাম জাতের আলুর বপনকৃত বীজ জমিতে জমে থাকা পানিতে পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শীতকালীন আগাম জাতের শাক-সবজির ক্ষেতেও দেখা দিয়েছে শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা। এ নিয়ে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নাঞ্চলের জমিতে লাগানো আগাম জাতের পাকা ধান গাছ ঝড়ো বাতাসে নুয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ধান গাছ জমে থাকা পানিতে পড়ে গেছে। এতে শীষ ভিজে রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মাঠে হাইব্রিড, টিয়া, ধানিগোল্ড, জটাপারি জাতের আগাম আমন ধান রয়েছে, যা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাটার কথা ছিল। কিন্তু ঝড়ে অনেক জমির ধান গাছ নুয়ে পড়েছে।
এদিকে শুধু আগাম আমন ধানই নয়, টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় এরই মধ্যে লাগানো আগাম জাতের শীতকালীন আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মূলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় এসব শাক-সবজির গাছের শেকড় পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলার জাফরপুর গ্রামের কৃষক ছামছুল হকের ১০ বিঘা জমিতে লাগানো আগাম জাতের ধান নুয়ে পড়েছে। একই এলাকার ইছব আলীর দেড় বিঘা জমির ধানও একই অবস্থা। তারা বলেন, ‘আর কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটতাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমেছে। শীষ পানিতে ডুবে রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ধান চিটা হয়ে যাবে। এতে ফলন যেমন কমবে, তেমনি বাজারে ধানের দামও পাওয়া যাবে না।’
একই এলাকার কৃষক শাহে আলম বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় আলুর বীজ পানির নিচে পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গঙ্গাপ্রসাদ এলাকার কৃষক মকসেদ আলী বলেন, তার এক বিঘা জমির আলু ক্ষেতে পানি জমে রয়েছে।’
রাজারামপুর গোয়ালপাড়া গ্রামের খোকন মোহন্ত বলেন, ‘অন্যের দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন। ১২ বস্তা বীজ আলুসহ তার মোট খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুর জমি ডুবে গেছে। আলু ক্ষেত রক্ষায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছেন।’
দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘গত শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের লোকজন মাঠে খোঁজ খবর রাখছেন। বৃষ্টিতে কিছু এলাকার আগাম আমন ধান নুয়ে পড়েছে এবং শীতকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যেসব জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর পাকা ধানে সমস্যা হয়েছে। তবে পানি শুকিয়ে গেলে বড় ধরনের সমস্যা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫০ হেক্টর। একইভাবে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৮১০ হেক্টর এবং আগাম জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।