ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য সড়ক বিভাগ ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ অফিসকে সড়কে থাকা ২১৭টি বৈদ্যুতিক পিলার স্থানান্তরের জন্য ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বিল প্রদান করে। কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের কাজের পরিমাণ মাত্র ৯৮টি পিলার অপসারণে সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাকি পিলারগুলো মরণফাঁদ হিসেবে এখনো সড়কেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রকল্পের অর্ধেক কাজ করে সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে সড়কে থাকা ২১৭টি বৈদ্যুতিক পিলার স্থানান্তরের জন্য ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসকে সড়ক বিভাগ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার পাঁচশ সতেরো টাকার চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করে। বিদ্যুৎ অফিস তাদের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পিলার সরানোর কাজ শুরু করে। দুই বছর মেয়াদে কাজ করেও বিদ্যুৎ অফিস মাত্র ৯৮টি পিলার স্থানান্তর করে।
সড়ক বিভাগ থেকে ভূঞাপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগকে ২০২২ সালে দেওয়া একটি চিঠির মাধ্যমে আরও জানা যায়, সড়ক প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে সড়ক বিভাগ ও ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসের মনোনীত প্রতিনিধিদের যৌথ জরিপের মাধ্যমে সড়কের উভয় পার্শ্বে বিদ্যমান ২১৭টি বৈদ্যুতিক পিলার স্থানান্তরের জন্য চিহ্নিত করা হয়। যার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ অফিসকে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর চেক প্রদান করা হয়।
২০২১ সালের ৪ আগস্ট কাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, ২১৭টি পিলারের মধ্যে মাত্র ৯৮টি পিলার সরানো হয়েছে এবং আরও ৫৮টি পিলার স্থানান্তর করতে হবে বলে চিহ্নিত করা হয়। এসময় বিদ্যুৎ অফিস নতুন করে কিছু বৈদ্যুতিক পিলার স্থাপনের চিত্র সরেজমিনে দেখে সড়ক বিভাগ। সেই পিলারগুলোতে তখনো কোনো লাইন টানা হয়নি। সেই পিলারগুলোও সড়ক বিভাগের প্রাক্কলনে ছিল না।
এদিকে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন কয়েকটি পিলার স্থানান্তরের জন্য বলা হলে সেগুলো পল্লী বিদ্যুতের পিলার উল্লেখ করে তা আর সরানো হয়নি। পরে বিদ্যুৎ অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস শাটডাউনে সম্মত হলে সেটা বিদ্যুৎ অফিস থেকে স্থানান্তর করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। ফের চিঠির মাধ্যমে শাটডাউনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎকে অনুরোধ করে সড়ক বিভাগ। পল্লী বিদ্যুৎ শাটডাউনে সম্মত না হয়ে উক্ত পিলারগুলো সরানোর জন্য একটি প্রাক্কলন প্রদান করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ অফিস যতগুলো বৈদ্যুতিক পিলার স্থানান্তর করেছে সেই অনুযায়ী অর্থ নিয়ে বাকি অর্থ পল্লী বিদ্যুৎকে দিয়ে তাদের পিলারগুলো সরানো হোক, অন্যথায় অর্থ ফেরত দিতে হবে।
এদিকে স্থানীয়রা সড়কে থাকা খুঁটিতে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কারো দোকানের শাটারের সম্মুখেই রয়েছে ১১ হাজার ভোল্টেজের ট্রান্সফরমার। বিদ্যুতের খুঁটিতে প্রায়ই ঘটে সড়ক দুর্ঘটনা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, খুঁটিতে প্রায়ই ভ্যানগাড়ি, অটোরিকশাসহ ভারী যানবাহন সরাসরি লেগে যায়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সম্ভাবনা আছে। এর আগে খুঁটির সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় খুঁটি ভেঙে গিয়েছিল।
কামরান পারভেজ নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, খুঁটিতে মাঝে মাঝেই গাড়ির ধাক্কা লাগে। এর আগে ধাক্কা লেগে খুঁটি ভেঙে যায়, ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। অতিদ্রুত সড়ক থেকে খুঁটি সরানোর দাবি জানাই।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাজ না করার জন্য টাকা নেওয়া এবং অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করার বিষয়টি প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার লোপাটের সমতুল্য। স্থানীয়রা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তৎপর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ভূঞাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মির্জা মহিউদ্দিন বলেন, সড়ক প্রশস্ত হলেও এখনো এর সুফল জনগণ ভোগ করতে পারছে না। সড়ক বিভাগ বারবার তাগিদ দিলেও বিদ্যুতের খুঁটি মরণফাঁদ হিসেবে এখনো সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে যানজট থেকে শুরু করে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দাবি, সড়ক থেকে অনতিবিলম্বে খুঁটি সরিয়ে দেওয়া হোক।
ভূঞাপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি রুক্ষ মেজাজে বলেন,
এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।