ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মো. আবু জাফরের সঙ্গে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণের বাগবিতণ্ডার একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটারে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ হিসেবে 'লেখালেখি করতে হয়' বলে জানান ডা. ধনদেব বর্মণ।
এ সময় ডিজি বলেন, আপনি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, কথাবার্তা হুঁশ করে বলবেন। এ সময় ডিজি নিজের সঙ্গের লোকজনকে ভিডিও করতে বলেন। ডিজি বলেন, যারা ডিজির সঙ্গে এমন ব্যবহার করে তারা রোগীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে। তখন চিকিৎসক বলেন, আমি রোগীর সঙ্গে অনেক ভালো বিহেব করি, কিন্তু যারা দায়িত্বে আছে তাদের সঙ্গে আমার বিহেব ভালো না। কারণ হিসেবে চিকিৎসক বলেন, ডাক্তার সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে নয়। তখন ডিজি বলেন, এটা তো অন্য বিষয়। কিন্তু আপনি তো বিহেবই শিখেন নাই। এ সময় চিকিৎসক বলেন, ঢাকায় তিনদিনের ট্রেনিং করলাম আপনার দুদিন আসার কথা ছিল একদিনও আসেননি। এ সময় ডিজি ও চিকিৎসকের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়৷ এ সময় চিকিৎসক বলতে থাকেন, আমাকে সাসপেন্ড করেন নো প্রবলেম। এ সময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস ও উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।
শিশুদের মূত্রাশয় ও প্রজননতন্ত্র সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা বিষয়ক চলমান চিকিৎসার সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে শনিবার একটি সেমিনারের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক সার্জন অব বাংলাদেশ (এপিএসবি) ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জারি বিভাগ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অডিটরিয়ামে এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ডা. মো. আবু জাফর। সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন মহাপরিচালক। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটারও পরিদর্শন করেন।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘বাংলাদেশের সব হাসপাতালেই ধারণাক্ষমতার বেশি রোগী। আমাদের হাসপাতালের সংখ্যা বাড়াতে হবে ও জনবল বাড়াতে হবে। যেকোনো সময় হিসাব করলে দেখা যাবে সারা দেশে ১৫ হাজার রোগী মেঝেতে থাকে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গেলে সময়ের দরকার, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় তো খুবই কম। এটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। দেশে অনেক হাসপাতাল রয়েছে যেগুলো এখনো অব্যবহৃত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এগুলো স্থাপন করা হয়নি। ভবন হয়েছে কিন্তু প্রশাসনিকভাবে এগুলো হস্তান্তর হয়নি। অথবা জনবল কাঠামো অনুমোদন হয়নি। এই সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আমরা যদি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মানসম্মত সেবা দিতে পারি তাহলে মেডিকেল কলেজগুলোতে চাপ কমে যাবে। আমরা সে চেষ্টা করছি।’
পরবর্তীতে শিশুদের মূত্রাশয় ও প্রজননতন্ত্র সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা বিষয়ক চলমান চিকিৎসার সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. নাজমুল আলম খান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস, অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক সার্জন অব বাংলাদেশের (এপিএসবি) সাধারণ সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসভাপতি ডা. মো. মোকারাবিন (রবিন) প্রমুখ।
ভাইরাল হওয়া বাগবিতণ্ডার বিষয়টি নিয়ে পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণকে মৌখিকভাবে ডিসচার্জ করেন বলে জানা যায়। পরে ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব বর্মণকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।




