ফেনীর জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা নবঘোষিত জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিটিকে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিবহির্ভূত’ ও ‘পকেট কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ত্যাগী নেতারা অভিযোগ করেন, ঘোষিত কমিটি তৃণমূলের মতামত, আলোচনা বা সাংগঠনিক সমন্বয় ছাড়াই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা জুলাইয়ের শহীদদের প্রতি অবিচার এবং এনসিপির ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
বক্তারা বলেন, ফেনীর মানুষ মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহস ও সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও ফেনী রাজপথে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জেলা, ১১ জন শহীদ এবং ৫০০–এর বেশি আহত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তবে সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অধিকাংশ নেতাকর্মীকেই উপেক্ষা করে অচেনা ব্যক্তিনির্ভর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা নবঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করেন:
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোন সাংগঠনিক বিধি অনুসরণ করা হয়েছে তা তৃণমূলকে জানানো হয়নি; এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতাও বিষয়টি জানতেন না।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সূচনাকারী ও সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল আজিজকে কমিটিতে রাখা হয়নি, যদিও তিনি এনসিপি গঠনের পর থেকেই সংগঠন শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
আন্দোলনের ‘স্লোগান মাস্টার’ ও আহত নেতা তাহমিদুল ইসলাম, যিনি নাগরিক কমিটি ও এনসিপির সব কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন, তাকেও বাদ দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত কমিটিতে চাঁদাবাজি ও ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে, যা তৃণমূলে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
পুরো কমিটিকে বক্তারা ‘২–১ জন কুচক্রী নেতার তৈরি পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি ফেনীর ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে বেইমানির শামিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমিটির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এক শহীদ পরিবারের সদস্য লিখেছেন, ‘কমিটি গঠনের পর আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। যারা আন্দোলনের সময় পাশে ছিলেন, তাদের রাখা হয়নি। অচেনা মানুষে ভরা একটি কমিটি।’
আরেকজন বলেন, ‘আজিজদের মতো ৫–৭ বছর ধরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করা মানুষদের বাদ দিয়ে এনসিপির কমিটি মানা যায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি চারটি দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. ঘোষিত ফেনী জেলা এনসিপি কমিটিকে অবিলম্বে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
২. ত্যাগী, পরীক্ষিত ও রাজপথে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।
৩. পকেট কমিটি তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ যেন এনসিপির আদর্শকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জুবায়ের, আবদুল কাইয়ুম সোহাগ, মোসলেহ উদ্দিন মাহদী, সানা উল্লাহ রাশেদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ।

-20251206184045.webp)

