‘পেঁয়াজের রাজধানী’ খ্যাত ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলা। বর্তমান সময়ে ভালো নেই সালথার পেঁয়াজ চাষিরা। পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হচ্ছে তাদের।
কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি মণ পেঁয়াজে ২০০ টাকা দাম কমে গেছে। উৎপাদন ও সংরক্ষণের খরচের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় ভাঁজ চাষিদের কপালে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সরজমিনে সালথা উপজেলা সদর বাজরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ শ থেকে ১৬ শ টাকা পর্যন্ত। এ সময় পেঁয়াজ বিক্রি করতে সিরাজ মোল্যা নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সাংবাদিক সাব আমাগো তো চালান উঠবে না, যদি এরকম দাম থাকে। আপনার সরকারকে বলেন, দুই হাজার থেকে ২৫ শ টাকা দাম না থাকলে আমরা পথে বসে যাব।’
বুধবার (২৫ জুন) উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি ও গট্টি ইউনিয়নের ঠেনঠেনিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় সাড়ে ১৪০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা দরে।
সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার বসে নকুলহাটি পেঁয়াজের হাট। আর রোববার ও বুধবার বসে ঠেনঠেনিয়া পেঁয়াজের হাট। এদিকে রোববার ও বৃহস্পতিবার বসে সালথা সদরে বৃহত্তর পেয়াজের হাট, শুক্র ও সোমবার বসে বালিয়া গট্টি পেঁয়াজের হাট।
এ ছাড়াও উপজেলার কাগদি, জয়কাইল, মোন্তার মোড়, মাঝারদিয়া, বাউষখালী ও যদুনন্দীতে বসে পেঁয়াজের হাট। এসব হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দূরদুরান্ত থেকে শতাধিক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী পেঁয়াজ কিনতে আসেন। প্রতি সপ্তাহে শতাধিক গাড়ি পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন শহরে নিয়ে যান তারা।
উপজেলার চাষিরা জানান, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যয় বাড়লেও সেই তুলনায় দাম বাড়েনি। শুরু থেকে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
নকুলহাটি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা আখের আলী জানান, পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘাটতি মিলিয়ে প্রতি মণ পেঁয়াজের যে খরচ চাষিদের হয়।
তিনি বলেন, ‘সেই তুলনায় বর্তমান বাজারে দাম অনেক কম। আজকে নকুলহাটি বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় সাড়ে ১৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ১৫০০ টাকা দরে। এতে প্রতিটি চাষির লোকসান গুনতে হচ্ছে। পেঁয়াজ যদি ২২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা দাম হয় তাহলে চাষিরা লাভবান হতো।’
ঠেনঠেনিয়া বাজারের পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা চাষি খলিল হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজের মৌসুমে বাজারে দাম ছিলো প্রতিমণ এক হাজার টাকা। ভালো দামের আশায় পেঁয়াজ ঘরে রেখে ৩০% ঘাটতি হয়েছে। কিছু পঁচে গেছে, কিন্তু এখন হাটে পেঁয়াজের যে দাম, তাতে চালান থেকে ঘাটতি পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান হাটে যদি পেঁয়াজের দাম দুই হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা দাম থাকত, তাহলে লোকসান গুনতে হতো না। বরং কিছু লাভ হতো।’
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের পর হঠাৎ করে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমে গেছে। তবে দাম বাড়বে কি না, এটা ধারণা করতে পারছেন না তারা।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস জানান, পেঁয়াজের মৌসুমে সালথা উপজেলায় ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ফলন ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, ‘কৃষিপণ্যের দাম অস্থিতিশীল। কয়েকদিন বৃষ্টি ছিল, তারপর আবার বাজারে পেঁয়াজের আমদানি বেশি হওয়ার কারণে দাম কিছুটা কমে গেছে। আশা করি আবার দাম বাড়বে।’