ফরিদপুর-৪ আসনের অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ঘিরে টানা বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও অস্থিরতায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভাঙ্গা। এই সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। এরই মধ্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বিষয়টিকে ‘জনগণের ন্যায্য আন্দোলন’ হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছেন। একই সঙ্গে ঢাকার ডিআইজি বলেছেন, তিনি ‘ফ্যাসিস্টদের ধরতে চান এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তা করবেন।’
ইসিতে ডিসির চিঠি
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল হাসান মোল্লা নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর এক চিঠিতে জানান, সম্প্রতি প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর-৪ এর আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সীমানা পুনর্বিন্যাস ঘোষণার পর থেকে ভাঙ্গা উপজেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে করে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
চিঠিতে ডিসি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের জনগণ তাদের ঐতিহাসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংযুক্তি বিচ্ছিন্ন করার এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না। তিনি অনতিবিলম্বে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ফরিদপুর-৪ এ ফিরিয়ে এনে সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত
গত কয়েকদিনে আন্দোলনকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিস, থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়সহ প্রায় ২০টি সরকারি অফিস ও যানবাহনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পাশাপাশি ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করায় যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
‘ফ্যাসিস্ট ধরতে চাই’
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ভাঙ্গা পরিদর্শনে এসে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা ফ্যাসিস্ট, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। তাদের গ্রেপ্তার করতে আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। এখানে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।’
পুলিশের কার্যক্রম
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান জানান, ‘আন্দোলনকারীদের হামলায় থানার একটি অ্যাম্বুলেন্স, তিনটি গাড়ি এবং সার্জেন্টদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে রাস্তায় কোনো টহল টিম কাজ করতে পারছে না, এবং কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।’
ভাঙ্গাবাসীর পাঁচ দফা দাবি
হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা এক ফেসবুক বার্তায় ভাঙ্গাবাসীর পক্ষে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো—
১. আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ভাঙ্গা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
২. গ্রেপ্তারকৃত চেয়ারম্যানসহ সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।
৩. নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. নতুন করে কোনো মামলা দেওয়া যাবে না।
৫. প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে রাতে।
তিনি বলেন, ‘এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া হলে আমরা ঘরে ফিরে যাব।’
অবরোধ শিথিল, তবে শঙ্কা রয়ে গেছে
আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন ভাঙ্গা থানার ওসি আশরাফ হোসেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে অবরোধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। অনেক মানুষ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন