ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপিতে ফিরছেন শাহ আবু জাফর?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম
শাহ আবু জাফর।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বিএনপিতে ফিরছেন বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিএনপিতে ফেরার পাশাপাশি তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন। সর্বশেষ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ডামি নির্বাচনে আবু জাফর বিএনপি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দেন এবং ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে জামানত হারান।

বারবার দল বদল করা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও বিএনএম থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তবে একবারও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। সর্বশেষ বিএনএম থেকেও পদত্যাগ করে তিনি জনতার পার্টি বাংলাদেশে যোগ দেন।

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনের রাজনীতিতে ফের নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। সম্প্রতি বিএনপিতে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। যদিও আবু জাফর স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি, তবুও তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।

ফরিদপুর-১ আসনে শাহ আবু জাফরের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৮০ ও ৯০-এর দশকে তিনি একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তার গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব এখনো অটুট বলে মনে করছেন অনেক বিএনপি নেতাকর্মী।

দলের অনেক তৃণমূল নেতা মনে করছেন, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিএনপি বিভক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ নেতার নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং সে জায়গায় শাহ আবু জাফরই উপযুক্ত বলে মনে করছেন অনেকে।

বিশেষ করে কৃষকদলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরের কর্মকাণ্ড বিএনপির ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ছয়বার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যেমন সাংবাদিক নির্যাতন, স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা, কমিটি বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টি করা। 

এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতারা উপেক্ষিত হয়েছেন। নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদে বসাচ্ছেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে রাজাকারদের সঙ্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির টিকিটে একাধিক নির্বাচনে পরাজিত খন্দকার নাসিরুল ইসলানের বিরুদ্ধে অতীতে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারি রাস্তার গাছ কেটে আত্মসাৎ করার কারণে তাকে ‘গেছো নাসির’ নামে ডাকা হয়।

অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আবু জাফরের অবদান বিএনপির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনতে পারে। এটি দলটির ভোটব্যাংক পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সূত্রে জানা গেছে, আবু জাফর সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ‘শেষবারের মতো’ ধানের শীষের পতাকাতলে ফিরতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে দল পরিবর্তনের কারণে অনেকেই তার রাজনৈতিক অবস্থানকে অস্থির ও সুবিধাবাদী বলে সমালোচনা করছেন।

এলাকার তরুণ ভোটারদের একটি অংশ মনে করছেন, পুরোনো মুখ দিয়ে নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে বিএনপি সফল হবে না; তারা নতুন নেতৃত্বে পরিবর্তন দেখতে চান।

এদিকে, গত ৩ নভেম্বর প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফরিদপুর-১ আসনে কোনো প্রার্থী এখনো ঘোষিত হয়নি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আসনটি মূলত শরিক দলের জন্য রাখা হয়েছে। শরিক দলের পক্ষে জনপ্রিয় ব্যক্তি ও সিনিয়র সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন আসনে নির্বাচন করতে পারেন। স্থানীয়ভাবে দোলন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা ও মন্দিরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় প্রশংসিত।

তবে আবু জাফর বলেছেন, ‘বিএনপিতে ফিরলেই কি মনোনয়ন পাওয়া যাবে—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ অর্থাৎ তার পুনরাগমন দলের ভেতরে নিশ্চয়তা বা স্থিতিশীলতা আনবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরিদপুর-১ ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। বিএনপি শেষবার জিতেছিল প্রায় ২৫ বছর আগে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দলীয় বিভাজন ও গ্রুপিংয়ের কারণে আসনটি পুনরুদ্ধার কঠিন হবে।