শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বাসস

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

পুলিশের ধাওয়ায় সিলেটে প্রথম শহীদ শাবি’র রুদ্র সেন

বাসস

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ১১:৪৪ এএম

শাবি শিক্ষার্থী শহীদ রুদ্র সেন। ছবি- সংগৃহীত

শাবি শিক্ষার্থী শহীদ রুদ্র সেন। ছবি- সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালের মধ্য জুলাইয়ে সারাদেশের ন্যায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সিলেটের রাজপথ। ১৪ জুলাই থেকে নানা ঘটনায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

১৮ জুলাই দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ফটকে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত হামলায় আহত হন শাবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন।

রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে খাল পারাপারের সময় পানিতে ডুবে মারা যান তিনি। তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে সিলেটে আন্দোলনে প্রথম শহীদ।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়করা জানান, আগের রাতে হল ছাড়ার নির্দেশ অমান্য করে অনেক শিক্ষার্থী হলে রয়ে যান। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধনে ১৮ জুলাই ভোর থেকে পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়।

তারা আরো জানান, দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে, অবরোধ করেন সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলছিল। সড়ক ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে উত্তেজনা চরমে ওঠে।

পুলিশ শটগান, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সংঘর্ষের মাঝেই গুলিবিদ্ধ হন অন্তত তিন জন শিক্ষার্থী এবং রুদ্রসহ অনেকে আহত হন।

বিকেলে সশস্ত্র ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা পুলিশের সঙ্গে মিলে দুই দিক থেকে হামলা করলে, স্থানীয় সাধারণ জনতা শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ সড়ক অবরোধ করে রাখেন আখালিয়া এলাকায়।

রাত ৮টার দিকে ফের শুরু হয় সংঘর্ষ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আখালিয়ার পেছন দিকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে গিয়ে ভেলায় করে একটি খাল পারাপার হতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যান রুদ্র সেন।

আজ তার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এক বছরেও রুদ্র হত্যা মামলার চার্জশিট হয়নি।

রুদ্র সেন শাবিপ্রবি’র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলায়।

বাবা সুবীর সেন ও মা শিখা বণিকের ছোট ছেলে রুদ্র। তার বড় বোন সুস্মিতা সেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুদ্রের বন্ধু ইমতিয়াজ ও সিয়াম জানান, রুদ্র প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ১৮ জুলাই পুলিশের হামলায় সে পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পায়। পরে আমরা মেসে ফিরে যাই।

বিকেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা সশস্ত্র হামলা করে এবং সন্ধ্যার পর পুলিশের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষ হলে আমরা একসঙ্গে বাঘবাড়ীর দিকে যাচ্ছিলাম। এই সময় পেছন থেকে পুলিশের ধাওয়ায় ভেলায় করে দ্রুত খাল পারাপারের সময় আমরা পড়ে যাই।

সবাই সাঁতরে তীরে উঠলেও রুদ্র ডুবে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাই। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার বোন সুস্মিতা সেন বলেন, রুদ্রকে নিয়ে লিখে কী আর হবে। অনেক পত্রিকায় খবর এলো, কিন্তু রুদ্র তো আর আসবে না।

ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই রুদ্র খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল। কখনও মিছিল-মিটিংয়ে যায়নি। কিন্তু কোটা আন্দোলনে তো সবাই যাচ্ছে। সেও মনে করেছে, তার যাওয়া উচিত। তারপর এই তো রুদ্র গেল, লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল।

মা-বাবার কথা জানতে চাইলে সুষ্মিতা বলেন, মায়ের বয়স এখন ৬০ বছর আর বাবার বয়স ৭০ বছর। আমিও এখন একা হয়ে পড়েছি।

এক বছরেও চার্জশিট হয়নি

শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থী রুদ্র সেন হত্যার ঘটনায় গত বছরের ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আব্দুল মোমেনের আদালতে মামলা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাবিপ্রবি শাখার সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম।

মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, শাবিপ্রবি’র সদ্য সাবেক উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন, সর্বশেষ সংসদের একাধিক সদস্য, আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।

আদালত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রব।

রুদ্র সেন মৃত্যুর ঘটনার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পদত্যাগী উপচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ, প্রক্টর কামরুজামান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জ ১ আসনের সাবেক সাংসদ রঞ্জিত সরকার, মৌলীভাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শাবিপ্রবি শাখার সমন্বয়ক ও রুদ্র সেন হত্যা মামলার বাদী হাফিজুল ইসলাম জানান, রুদ্র সেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিল।

১৮ জুলাই দিনে সে সামনে থেকে আন্দোলন করেছে এবং আহত হয়ে একটি বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল। সন্ধ্যার পর নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়। তখন পুলিশ ধাওয়া করলে আখালিয়ার পেছন দিকে একটি খাল পারাপারের সময় পানিতে ডুবে মারা যায় রুদ্র।

রুদ্র সেন হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে। চলতি মাসে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে আদৌ কতটা অগ্রগতি হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। সিলেটে ফিরে বিষয়টির জানার চেষ্টা করবো।

এদিকে, রুদ্র সেনের স্মৃতি রক্ষায় শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি লেকের নামকরণ তার নামে করেছে। শিক্ষার্থীরা তার নামে একটি হলেরও নামকরণের দাবি জানিয়েছে।

গত ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে ফুডকোর্ট সংলগ্ন নতুন নির্মিত লেকটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী।

যদিও, আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা শাবি মূল ফটককে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামকরণের ঘোষণা দেন। তারা মূল গেটে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ লেখা সংবলিত একটি প্ল্যাকার্ড বেধে দেন।

সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নতুন হল নির্মাণ হচ্ছে সেটি শহীদ রুদ্র সেনের নামে নামকরণের জন্য আমরা দাবি জানাব। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশাসন আমাদের দাবির গুরুত্ব বিবেচনায় নামকরণে সম্মত হবেন।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!