জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জে এখন পর্যন্ত ৩১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (২০ জুলাই) নতুন করে আরও ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ দিন সদর থানা পুলিশ ৯ জন, কোটালীপাড়া ৮ জন, মুকসুদপুর ৪ জন ও কাশিয়ানী থানা পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে পুলিশ সূত্র থেকে জানা যায়, চলমান সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনায় নতুন করে ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ নিয়ে মামলার সংখ্যা দাঁড়াল ৮টি এবং আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪০৪।
কারফিউ শেষ, চলছে ১৪৪ ধারা
শনিবার (১৯ জুলাই) রাত ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলাজুড়ে কারফিউ জারি ছিল। কারফিউ শেষ হলেও সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরো জেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকর রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী, জরুরি সেবা ও সরকারি অফিস-আদালত এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।’
সকাল থেকে সীমিত পরিসরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে, অফিস-আদালতও খুলেছে। তবে জনমনে গণগ্রেপ্তার নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হরতাল
আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল থাকলেও গোপালগঞ্জে এর কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। কোথাও পিকেটিং বা মিছিল হয়নি।
তবে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় বের না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজন।
আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
এদিকে ১৪৪ ধারার মধ্যেও এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা আতঙ্কের মধ্যেই পরীক্ষা দিয়েছেন। দ্রুত এর শেষ দরকার, আমাদের নিরাপদ প্রয়োজন।
গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি
সংঘর্ষের ঘটনার জেরে চলমান গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি।
দলের সভাপতি এস. এম. মহিউদ্দিন বলেন, ‘নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। যদি এসব বন্ধ না হয়, আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
প্রশাসনের আশ্বাস
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকে যেন হয়রানি না করা হয় সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ঘটনার সূত্র
উল্লেখ্য, এনসিপির সমাবেশের ঘটনা কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখনো জেলাজুড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে।
জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে, তবে সাধারণ মানুষের দাবি, দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হোক।