সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে মিলন হয়েছে যশোরের কেশবপুর উপজেলার আব্দুর রহিম ও ধর্মান্তরিত আয়েশা খাতুনের (সাবেক সোহাগী দাস)। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে ও স্বামীর সঙ্গে সংসার করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) যশোর নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে আয়েশা খাতুন বলেন, ‘আমি আব্দুর রহিমকে ভালোবেসে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। কোনো বাধা নয়, আমি তার সঙ্গেই সারাজীবন থাকতে চাই।’
এরপর তিনি কোনো পিছুটান ছাড়াই রহিমের হাত ধরে চলে যান তার বাড়িতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রহিমের আইনজীবী রুহিন বালুজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিমের সঙ্গে দুই বছর আগে পরিচয় হয় স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক সোহাগী দাসের। পরিচয়ের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গত ২৩ জুন সোহাগী দাস হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম পরিবর্তন করে আয়েশা খাতুন রাখেন। এরপর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে আব্দুর রহিমকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পরদিন বিকেলে রহিম ও আয়েশা মণিরামপুর উপজেলার কুয়াদা বাজারে কেনাকাটা করতে যান। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আয়েশাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় তার স্বজনরা।
স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আয়েশা। পরদিন তিনি বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্বজনরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে তাকে বাবার বাড়িতে এনে একরকম গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
পরে স্ত্রীকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ২৯ জুন আব্দুর রহিম আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিচারক আয়েশার বাবা পরিমল দাস ও মা-কে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠন থেকেও চাপ তৈরি করা হয়।
পরিবারের নানামুখী চাপ ও আইনগত প্রক্রিয়ার মুখে পড়ে অবশেষে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) আয়েশাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর আয়েশা স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে যশোর নোটারি কার্যালয়ে হাজির হন এবং সেখানে আবারও নিজের বিয়ের সিদ্ধান্ত পুনরায় ঘোষণা করেন।
রহিমের আইনজীবী রুহিন বালুজ বলেন, ‘প্রেম কোনো ধর্ম মানে না। কোনো বাধাই রহিম ও আয়েশাকে আলাদা করতে পারেনি। তারা একে-অন্যকে ভালোবাসে এবং আমৃত্যু একসঙ্গে থাকতে চায়। তাদের এই মানবিক ও সাহসী সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সম্মান ও শুভকামনা রইল।’