স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল করিডোর। দেশের মোট আমদানি বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে এই পথ দিয়ে।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতের পক্ষ থেকে কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সাময়িক বাধা সৃষ্টি হলেও বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে প্রবেশ করছে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হিসেবে বেনাপোলে বছরে প্রায় ২২-২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য সংরক্ষণের জন্য বন্দরে রয়েছে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। ছোট পণ্য রাখা হয় শেডে, আর বড় আকারের পণ্য রাখা হয় ওপেন ইয়ার্ডে।
কিন্তু এসব অবকাঠামো পরিকল্পনাহীনভাবে তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি যানবাহন ও শ্রমিকদের চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।
গত ১৪ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডের চারপাশে পানিতে টইটম্বুর অবস্থা তৈরি হয়। শেডের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়ে, যার ফলে কোটি কোটি টাকার পণ্য ক্ষতির মুখে পড়ে। খোলা আকাশের নিচে থাকা মালামালও পানিতে ভাসতে দেখা যায়। বন্দরের নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে থাকায় দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না।
জলাবদ্ধতার এ পরিস্থিতিতে বন্দরের নিরাপত্তার পাশাপাশি আমদানি করা পণ্য পাহারা ও রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর সদস্যরা। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে তারা পণ্যের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। এতে অনেকেই পড়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
বেনাপোল স্থলবন্দরে আনসারদের নিরাপত্তা দায়িত্বে রয়েছেন একজন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি), ছয়জন অ্যাসিস্ট্যান্ট পিসি (এপিসি) এবং ১৫৮ জন সদস্য। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও তারা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অথচ তাদের এই শ্রম ও ত্যাগের কোনো স্বীকৃতি নেই; পরিবার নিয়ে সীমিত বেতনে জীবন চালাতে হয় তাদের।
নিতা কোম্পানি লিমিটেডের অফিস সহকারী মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘বন্দরের অনেক জায়গা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় আনসার সদস্যরা যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনে আনসারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রতিটি চেকপয়েন্টে তাদের জন্য আলাদা ছাউনি প্রয়োজন। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া তারা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’
আনসার বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার হেলাল উজ্জামান বলেন, ‘জলাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অথচ আমাদের খোঁজ নিতে প্রশাসনের কেউ আসে না। আমরা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি, এটুকুই আমাদের তৃপ্তি।’