যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যশোর কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে মামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে বুধবার (২৬ নভেম্বর) এ মামলা দায়ের করেন।
এর আগে, মঙ্গলবার রাতে যৌথবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মোনায়েম হোসেনকে আটক করে। মোনায়েমকে এই মামলার আসামি হিসেবে আটক দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে যবিপ্রবি প্রশাসন। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পেয়েছেন ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার ইমরান খান। রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ।
মামলায় বলা হয়েছে, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস মেরামতের কাজে যশোর কোতোয়ালী মডেল থানাধীন আমবটতলা এলাকার ‘মোনায়েম টেলিকম’ দোকানে যান। দোকানে ভিড় থাকার কারণে তারা নিজেরাই ডিভাইস খুলতে থাকেন। এক পর্যায়ে একজন ছাত্রীর হাত সামান্য কেটে গেলে দোকানদার অভিযুক্ত মোনায়েম তার হাত স্পর্শ করেন। ছাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তিনি “ঔষধ লাগানোর চেষ্টা” করার অজুহাত দেন। এতে বিব্রত হয়ে ছাত্রী তার হাত সরিয়ে নেন।
কাজ শেষে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় দোকানদার মোনায়েম ছাত্রীদের উদ্দেশে অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। পরে ছাত্রীরা বিষয়টি তাদের ক্লাসমেটদের জানালে রাইয়ানুল ইসলাম, মেহনাজ মুনিব তন্ময়, আব্দুল্লাহ আল জোবের, সাব্বির আহম্মেদ, ইয়াছিন আরাফাত শেখ, রাতুল হাসানসহ অন্যান্য শিক্ষার্থী দোকানে গেলে অভিযুক্ত মোনায়েম তাদের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান।
চুড়ামনকাটির সাজিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আব্দুর রউফ জানান, যবিপ্রবি বর্তমানে শান্তিপূর্ণ। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পুলিশ টহল দিচ্ছে। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার জন্য আহবান জানানো হয়েছে।
স্থানীয় হাফিজুর রহমান ও দিপু দফাদার জানান, মোনায়েমকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। সেদিন ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনা ঘটেনি; এটি একটি সাজানো নাটক মাত্র।
তারা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আচরণ প্রায়ই উগ্র এবং আমবটতলা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকে। ঘটনার রাতে চুড়ামনকাটি বাজারে অবস্থান নেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী পুলিশের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করেছে। তাদের উগ্রতার কারণে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তারা সতর্ক করেছেন, “শিক্ষার্থীরা এবার যদি অন্যায় করে, এলাকাবাসী তার জবাব দেবে।”
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার জানান, যবিপ্রবি প্রশাসনের মামলায় মোবাইল দোকানি মোনায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরীহদের গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যবিপ্রবি এলাকায় পুলিশের বাড়তি নজর রয়েছে।
যবিপ্রবির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আমরা বাজার কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মিলিয়ে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছি।”


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন