দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে একাধিক মামলা চলছিল। সম্প্রতি সেই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এক ভাইয়ের দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায়।
দুদকের সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নওশাদ আলী বাদী হয়ে গত বছরে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত ওই স্থাবর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) রিসিভার হিসেবে নিযুক্ত করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ইউএনও আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের কানুপুর গ্রামে ফজলুর রহমানের তিন বিঘা ২৫ শতাংশ আবাদি জমির দখল বুঝে নেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠা ফজলুর রহমান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে এক্সামিনার অব অ্যাকাউন্টস পদে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এখনো চলমান।
ফজলুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি বৈধ আয়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং আয়কর রির্টান দাখিলের সময় জমিগুলো ভুলক্রমে ফাইলে নেওয়া হয়নি। তিনি তার বড় ভাই শফিউল আলমকে বিষয়টি উসকানি দেওয়ার জন্য দায়ী করেন। তবে শফিউল আলম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দুদকের সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মেহেবুবা খাতুন জানান, ফজলুর রহমান চাকুরিতে কর্মরত অবস্থায় ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৬ টাকার স্থাবর সম্পত্তি ও ৮০ লাখ ১৫ হাজার ২৬ টাকার অন্যান্য সম্পদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করেছেন।
এ ঘটনায় দুদক মামলা করলে আদালত তার জয়পুরহাটের বাড়ি ও আক্কেলপুরের তিন বিঘা ২৫ শতক জমি ক্রোক করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ইউএনওকে দেন। আজ বৃহস্পতিবার ইউএনও কানুপুর মাঠের জমিগুলো দখল বুঝে নিয়েছেন। মামলার চার্জশিট প্রস্তুত হয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আক্কেলপুর ইউএনও দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা খানম বৈশাখী বলেন, ‘ফজলুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালত আমাকে রিসিভার নিয়োগ করেছেন। আদালতের নির্দেশে তিন বিঘা ২৫ শতক জমির দখল বুঝে লাল ঝাণ্ডা পুঁতে দেওয়া হয়েছে। তবে জয়পুরহাট সদরের ছয় শতাংশ বাসার দখল নেওয়া হয়নি, কারণ আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।’
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অস্বীকার করে ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার সব সম্পদ বৈধ। আয়কর রির্টান দাখিলের সময় জমিগুলো ভুলক্রমে ফাইলে তোলা হয়নি। আমাদের ভাইদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ সুযোগে আমার বড় ভাই শফিউল আলম আমার ক্ষতি করেছে।’
শফিউল আলম বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। তবে আমার পরিবারের কেউ দুদকে অভিযোগ করেনি। আমি শুধু জানি, দুদক ফজলুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছে।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন