ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

পাইকগাছার হরিঢালী স্কুলে অস্থিরতা, পরীক্ষা-ক্লাস বর্জন

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে যশোর শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ এবং নানা অনিয়মের কথা বলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষা বোর্ড স্থানীয় ডা. মো. মোকাররম হোসেনকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনীত করে। যদিও বিদ্যালয় থেকে পাঠানো ৩ জনের প্রস্তাবিত তালিকায় তার নাম ছিল না।

বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পৌঁছালে তিনি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে পদত্যাগ করেন।

এদিকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি কোনো এজেন্ডা ছাড়াই গত ২৫ মে বিদ্যালয়ে এসে সভা করার ঘোষণা দেন। শিক্ষকরা সভায় অংশ না নেওয়ায় সেটি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে ২৩ জুন তিনি আবার একইভাবে সভা আহ্বান করেন, তবে শিক্ষক প্রতিনিধি স্বাক্ষর না করায় সেই সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি।

পরবর্তীতে সভাপতি তার একক ক্ষমতাবলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক প্রকাশ ঘোষ এবং অফিস সহকারী সুভাষ মণ্ডলকে বহিষ্কার করেন।

একইসঙ্গে সুরঞ্জনা রায়, অনিশ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং সবুজ সরদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন।

তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে ১৩ নম্বর ক্রমিকে থাকা সহকারী শিক্ষিকা নুরুন্নাহারকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বিদ্যালয়ের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন এবং বিদ্যালয়ের অর্থের অপব্যবহার করছেন।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা ও নিয়মিত ক্লাস বর্জন, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

বহিষ্কৃত সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সভাপতি যশোর বোর্ডের আইএস কামরুজ্জামানের বন্ধু। তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে সভাপতির পদে বসেছেন। এখন নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু করছেন।’

অন্যদিকে সভাপতি ডা. মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমি যা করেছি, আইন অনুযায়ী করেছি। আমার বিরুদ্ধে বোর্ডে অভিযোগ হয়েছে, বোর্ড যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমি তা মেনে নেব। তবে বিদ্যালয়ের কেউ আমার নির্দেশ মানছে না।’

যশোর বোর্ডের আইএস কামরুজ্জামানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ শাহজাহান আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’